খড়্গপুর আইআইটিতে সুন্দর পিচাই (বাঁ দিকে)। সঙ্গে প্রশ্নকর্তা হিতেশ ওবেরয়।
নিজে যখন গুগ্লের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের চাকরিটা পাওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন, তখন ‘জি মেল’ জিনিসটা কী, জানতেনই না সুন্দর পিচাই! ইন্টারভিউ বোর্ডের এক সদস্যের প্রশ্নে ভেবেছিলেন, ‘জি মেল’ বোধহয় ‘এপ্রিল ফুল’ বানানোর কোনও জোক! দিনটা তো ছিল পয়লা এপ্রিল, ২০০৪। গুগ্লের ‘জি মেল’ তখন সবে শুরু হয়েছে। তাই সেটা খায় না মাথায় দেয়, তা জানার ফুরসৎই পাননি তখন সুন্দর পিচাই।
সেই পিচাই খড়্গপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (আইআইটি) ছাত্রছাত্রীদের একেবারে জলের মতো সহজ করে বুঝিয়ে দিলেন, কী ভাবে সহজেই গুগ্লের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা হাতে পাওয়া যায়! জানালেন, খড়্গপুর আইআইটি’র ছাত্রছাত্রীরা যাতে সহজে গুগ্লের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা পকেটে পুরতে পারেন, তার জন্য আইআইটি’র ক্যাম্পাসেই গুগ্লের একটি সেন্টার খুলতে পারেন তিনি। তার ফলে, চাকরি পাওয়ার জন্য মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আর গুগ্লের দোরে দোরে ঘুরতে হবে না। গুগ্লই চলে আসবে মেধাবীদের কাছে!
‘জি মেল’ কী জিনিস, তা না জেনে গুগ্লের সিইও-র চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া যায়? আপনি যতটা অবাক হচ্ছেন, ২০০৪ সালে গুগ্লের ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা অবাক হয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি। চার নম্বর ইন্টারভিউ পর্যন্ত পিচাইকে কেউ ‘জি মেল’ নিয়ে কোনও প্রশ্ন করেননি। পঞ্চম দফার ইন্টারভিউয়ে বোর্ডের এক সদস্য পিচাইকে হঠাৎ প্রশ্ন করেন, ‘‘জি মেলটা হচ্ছে কেমন?’’ পিচাই সেই প্রশ্ন শুনে থ’ হয়ে যান। সে আবার কী? ভাবেন, ‘এপ্রিল ফুল’ বানানো হচ্ছে নাকি তাঁকে! ‘জি মেল’ তখন সবে চালু হয়েছে। পিচাইয়ের কানে সে খবর পৌঁছয়নি। আর সেই মেল দেখা তো দূর অস্তই। এর পর খোঁজখবর নিয়ে পিচাই ‘জি মেল’ দেখতে শুরু করেন। ষষ্ঠ দফার ইন্টারভিউয়ে ‘দেখেছি, দেখেছি’ বলেই চালিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর সপ্তম দফা থেকে দশম, ইন্টারভিউ যত গড়াচ্ছিল, বোর্ডের সদস্যরা ততই অবাক হতে শুরু করেন পিচাইকে দেখে, কী ভাবে ‘জি মেলে’র উন্নতি ঘটানো যায় তড়তড়িয়ে, তা টপাটপ বলে যাচ্ছিলেন পিচাই। যেন সুপার সুপার কম্পিউটার!
আরও পড়ুন- ৯৭ শতাংশ বাতিল নোটই ব্যাঙ্কে জমা? জানি না বলে এড়ালেন অরুণ জেটলি
সেই পিচাইয়ের কথা শুনেই বৃহস্পতিবার হাঁ হয়ে গেলেন খড়্গপুর আইআইটি’র ছাত্রছাত্রীরা। এত সহজে গুগ্লের চাকরি পাওয়া যায়! গুগ্লই এসে যাবে হাতের মুঠোয়! পিচাই জানতে চান, ‘‘তোমরা গুগ্লে চাকরি করতে চাও? তা হলে হাত তোল।’’ সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের প্রায় সবাই হাত তুলে দেন। পিচাই জানালেন, গুগ্লের ইন্টারভিউ বোর্ডের লোকজনেরা তেমন কড়া ধাতের মানুষও নন। দশ-দশটা দফায় ইন্টারভিউ হয়েছিল পিচাইয়ের। তারই মধ্যে ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে আইসক্রিম খাইয়েছিলেন। গপ্পোটপ্পোও করেছিলেন। একেবারে ঘরোয়া গল্প!
খড়্গপুর আইআইটি’র ছাত্রছাত্রীদের সামনে এ দিন ইনফোএজের হিতেশ ওবেরয়ের ‘ইন্টারভিউ’-এ একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন পিচাই, সাবলীল ভাবেই। কোনও কিছুই গোপন করতে চাননি। কবুল করেছেন, তাঁর দশ দফার ইন্টারভিউয়ে তাঁর সঙ্গে এক বারও দেখা হয়নি গুগ্লের সহ প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের।
এক ছাত্রের প্রশ্ন ছিল, ‘‘আপনি তো অঙ্কের লোক। কম্পিউটার সায়েন্স জানা লোকের জন্য যে চাকরিটা হয়, সেটা পেলেন কী ভাবে?’’
পিচাই জবাব দিয়েছেন, ‘‘অঙ্কেরও বাজার রয়েছে। বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে। আর কম্পিউটারের কোডিং, ডি-কোডিংগুলি এক জন গণিতজ্ঞকেই বোঝানো যায় সহজে। অন্যদের চেয়ে।’’