Ramesh Pokhriyal

গবেষণা নিয়ে প্রশ্নে মন্ত্রীর মুখে নালন্দা!

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শুরুতেই মনে করিয়ে দেন, ভারতের সমস্ত ছিল। খোওয়া গিয়েছে এত দিনের দাসত্বের অভ্যেসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৬:৩৬
Share:

কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল।—ফাইল চিত্র।

মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীর কাছে বণিকসভার প্রশ্ন ছিল, করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষার পরিকাঠামো সকলের দরজায় পৌঁছে দেওয়া যাবে কী করে? কী ভাবে তার সুবিধা নেবেন দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের পড়ুয়ারা? গবেষণায় আমেরিকা, চিনের মতো দেশকে টেক্কা দেওয়ার টোটকাই বা কী? দেশের সেরা মেধাবীদের এখানেই ধরে রাখতে কী পদক্ষেপ করবে সরকার? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মন্ত্রী ভিডিয়ো-কনফারেন্সে ‘ছুঁয়ে গেলেন’ ঠিকই। কিন্তু স্পষ্ট পথ নির্দেশিকা তাতে মিলল না। বরং বক্তব্যের বড় অংশ জুড়ে রইল তক্ষশীলা, নালন্দা, শ্রীকৃষ্ণ আর করোনার সঙ্কটকালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের গুণগান!

Advertisement

বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম আয়োজিত ভিডিয়ো-আলোচনায় বৃহস্পতিবার মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের সামনে প্রশ্নগুলি তুলেছিলেন বণিকসভার কর্তারা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, নিজের দেশের মেধাকে বাইরে থেকে ফিরিয়ে আনতে চিন গবেষণার সুযোগ-সুবিধা কিংবা পরিকাঠামোর পিছনে যে পরিমাণ অর্থ ঢালছে, ভারত তার ধারেকাছে কি না। জানতে চেয়েছিলেন, কী করলে উল্টে ভিন্ দেশি পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষার জন্য আসবেন এই দেশে। তার উত্তর যে মন্ত্রী দেননি, তা নয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছেছেন দেশের ‘গৌরবময় ইতিহাস আর উজ্জ্বল বর্তমানে’র পথ ঘুরে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শুরুতেই মনে করিয়ে দেন, ভারতের সমস্ত ছিল। খোওয়া গিয়েছে এত দিনের দাসত্বের অভ্যেসে। তাঁর কথায়, “ভারতই তো বিশ্বগুরু ছিল। সারা পৃথিবীর পড়ুয়ারা ভিড় করতেন তক্ষশীলা, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে।” এক শিল্পকর্তার কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় মানেই তক্ষশীলা, বিমান মানেই পুষ্পক রথ আর শল্য চিকিৎসা মানেই যদি গণেশের শরীরে হাতির মাথা বসানোর উদাহরণ টানা হয়, বলা হতে থাকে যে আগে দেশে সবই ছিল, তা হলে তো আর নতুন করে গবেষণার জন্য কিছু বাকি থাকে না!’’

Advertisement

মন্ত্রী অবশ্য সেখানেই থামেননি। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর আদর্শ, শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা ঘুরে তাঁর বক্তব্য বাঁক নিয়েছে বর্তমানে। দাবি করেছেন, কী ভাবে করোনার এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতেও সারা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব। মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিনি ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত না-নিলে, কী ভাবে প্রবল সমস্যার মুখে পড়তেন দেশের ১৩০ কোটি মানুষ। শিক্ষার নোন্নয়নের পথ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরের গৌরচন্দ্রিকায় জায়গা পেয়েছে এই সবই!

আসল কথাটি যখন পেড়েছেন, ধোঁয়াশা রেখেছেন সেখানেও। নিশঙ্কের দাবি, দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের শেষতম পড়ুয়ার হাতেও যাতে অনলাইন শিক্ষার উপকরণ পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করা হবে। সরকারের লক্ষ্য, প্রত্যেক ঘরে তা পৌঁছনো। কিন্তু তার পরেই যোগ করেছেন, এই বিষয়ে সমস্ত রাজ্যকে এগিয়ে আসার আর্জি জানানো হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ওই পরিকাঠামো পৌঁছনোর দায় মূলত রাজ্যের ঘাড়েই চাপিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্র? আর এখন বহু জনের কাছে অনলাইন-পরিকাঠামো না-থাকার খবর যদি সরকারের ঘরে থাকে, তবে কোন ভরসায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য নেট-নির্ভর পরীক্ষার দরজা খোলা রাখছে ইউজিসি?

মন্ত্রীর দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে চাকা ঘুরতে শুরু করেছে বহু ক্ষেত্রেই। যেমন, বাইরে যাওয়ার পরিবর্তে এখন দেশেই পড়াশোনা করতে চাইছেন অনেকে। বিদেশি পড়ুয়াদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে ভারতে পড়তে আসার। গবেষণায় খামতি রাখা হচ্ছে না বরাদ্দের। যদিও দাবির সপক্ষে তেমন কোনও খবর বা প্রমাণ দেননি মন্ত্রী। অর্থনীতিবিদদের বড় অংশের অভিযোগ, শিক্ষা এবং গবেষণায় সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় নিছকই সামান্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন