দুমকায় আদিবাসী ছাত্রাবাসে বিশাল অস্ত্রাগারের হদিশ, গ্রেফতার তিন

নামেই ছাত্রাবাস। আবাসিকদের কারও খাটের তলায় মিলল তির, কোথাও বল্লম, রান্নাঘরে তলোয়ার, লাঠি!

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচী শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৪
Share:

উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র।

নামেই ছাত্রাবাস। আবাসিকদের কারও খাটের তলায় মিলল তির, কোথাও বল্লম, রান্নাঘরে তলোয়ার, লাঠি!

Advertisement

ঠিক যেন জঙ্গলের জঙ্গি শিবির।

এমনই অস্ত্রাগার ছিল ঝাড়খণ্ডের দুমকার সাঁওতাল পরগনা কলেজের ৮টি আদিবাসী ছাত্রাবাসে।

Advertisement

ওই ছাত্রাবাসে বেআইনি কার্যকলাপের খবর আগে পেয়েছিল পুলিশ। আজ ভোরে সেখানে হানা দেয় নিরাপত্তাবাহিনী। অস্ত্রের বহর দেখে চোখ কপালে ওঠে পুলিশকর্তাদের। দুমকার এসপি প্রভাত কুমার বলেন, ‘‘সন্ধে পর্যন্ত ছাত্রাবাসগুলি থেকে প্রায় ২৫ হাজার তির-ধনুক উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে শ’খানেক তলোয়ার, বল্লম, লাঠি। তল্লাশি চলছে। ৮ জনকে আটক করে জেরা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।’’

সাঁওতাল পরগনা (এসপি কলেজ) কলেজে ৮টি আদিবাসী ছাত্রাবাসের দু’টি রয়েছে কলেজ চত্বরে। অন্যগুলি কলেজের বাইরে। ছাত্রাবাসগুলি দেখাশোনার ভার জেলার কল্যাণ বিভাগের। ওই সব ছাত্রাবাসে সিধো-কানহু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও থাকেন। পুলিশের বক্তব্য, নজরদারি এড়িয়ে সেখানে ছিল বহিরাগতরাও। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘শুধু অস্ত্র নয়, ছাত্রাবাসগুলিতে মিলেছে মদের বোতল, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কন্ডোম, নীল ছবির সিডিও।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রাবাসে মিলেছে পাঁচটি পুলিশের উর্দিও। সেগুলি মাওবাদীদের হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলার এসপি জানিয়েছেন, ছাত্রাবাসের আবাসিকদের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ ছিল কি না, তা দেখা হচ্ছে। দুমকার ডিসি রাহুল কুমার সিনহা বলেন, ‘‘ওই সব ছাত্রাবাসে মোট ১ হাজার ২৫০ জন ছাত্রের থাকার কথা। সেখানে ৩ হাজার জন থাকত। বেশিরভাগই বহিরাগত।’’

২৫ নভেম্বর ঝাড়খণ্ড বন্‌ধে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল দুমকায়। সাঁওতাল পরগনা কলেজের কাছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি ট্রাক ও বাসে আগুন লাগানো হয়। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় ছাত্রাবাসের কয়েক জন জড়িত ছিল বলে খবর মিলেছিল।’’ ডিসি জানান, বন্‌ধের দিন কলেজের সামনের রাস্তায় তির-ধনুক, বল্লম নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল কয়েক জনকে। এর পরই ছাত্রাবাসে তল্লাশির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রতিরোধ রুখতে সতর্ক হয়েই আজ অভিযান চালায় পুলিশ। সামিল ছিলেন শ’চারেক নিরাপত্তাকর্মী। হাজির ছিলেন এসপি প্রভাত কুমারও। ভোরে পুলিশ যখন ছাত্রাবাসগুলিতে ঢোকে তখনও আবাসিকরা গভীর ঘুমে। জেলার ডিসি জানান, কোনও ছাত্রাবাসে সুপার ছিলেন না। সেখানে কে থাকবে তা ঠিক করত ছাত্র সংগঠন।

সিধো-কানহু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর সত্যনারায়ণ মুন্ডা বলেন, ‘‘ছাত্রবাসগুলির প্রশাসনিক দায়িত্ব কল্যাণ বিভাগের। সেখানকার কার্যকলাপের উপর নজর রাখার জন্য আমরা কয়েক বার ওই দফতরে চিঠি পাঠিয়েছিলাম।’’

পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, মূলত ওই সব ছাত্রাবাসে রাজ্যের বিরোধী দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সমর্থকদের ভিড় ছিল। অভিযোগের মুখে জেএমএম মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেক আদিবাসীই নিজের সঙ্গে পারম্পারিক অস্ত্রশস্ত্র রাখেন। তা বেআইনি নয়। সে রকমই কিছু অস্ত্র ওই সব ছাত্রাবাসে হয়তো পাওয়া গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন