খাক: আগুনে ভস্মীভূত ঘরবাড়ি। বান্দ্রায় বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
ফুটব্রিজটার মাথা ছাপিয়ে লাফিয়ে উঠছে আগুন। হুহু কালো ধোঁয়া। ওই ফুটব্রিজ— মানে ‘স্কাইওয়াক’ দিয়েই মুম্বইয়ের পূর্ব বান্দ্রা থেকে সোজা পৌঁছনো যায় বান্দ্রা স্টেশনে। এক এক সময়ে মনে হচ্ছে, ব্রিজ বেয়ে এসে যেন স্টেশনটাকেও গিলে ফেলবে আগুন। দেখতে দেখতে আগুন সত্যিই ছুঁয়ে ফেলল ব্রিজের একটা অংশকে।
অফিস-ফেরত আতঙ্কিত জনতার ভিড় তখন বান্দ্রা স্টেশনের ভেতরে-বাইরে। ধাক্কা খেয়েছে ট্রেন চলাচলও। আর স্টেশন-লাগোয়া বস্তিটা থেকে ছিটকে আসছে চিৎকার। সেটা জ্বলছে।
বান্দ্রা স্টেশনের পাশে বেহরমপড়া বস্তিতে আজ আগুন লাগে বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ। বস্তির একটা অবৈধ অংশ ভাঙার কাজ চালাচ্ছিল বৃহন্মুম্বই পুরসভা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ওই ভাঙাভাঙির সময়েই জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ পান তাঁরা। তখন রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটেছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। এক নয়, একাধিক। তা থেকেই আগুন।
১০টা জলের ট্যাঙ্কার নিয়ে দমকলের ১৬টা ইঞ্জিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজে নেমে পড়ে। হতাহতের খবর নেই। তবে এক দমকলকর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পায়রার খোপের মতো চার-পাঁচতলা বস্তিও রয়েছে বেহরমপড়ায়। সেখানে কেউ আটকে রয়েছেন কি না, দেখতে চলছে তল্লাশি।
মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনের ওয়েস্টার্ন ও হারবার লাইন গিয়েছে বান্দ্রা ছুঁয়ে। এর মধ্যে হারবার লাইনের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে পূর্ব বান্দ্রার দিকটায়। আজ আগুন ছড়াতে শুরু করায় হারবার লাইনের অন্ধেরী-ওয়াডালা অংশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, ‘‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই বিকেল ৪টে ২৫ থেকে আমরা হারবার লাইনে আপ ও ডাউন ট্রেন বন্ধ করে দিই।’’ তবে ওয়েস্টার্নের কোনও ট্রেন বন্ধ হয়নি বলেই দাবি করেছেন সেখানকার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক।
আগুন নিভতে নিভতে প্রায় সন্ধে ৭টা। ক্ষতির হিসেব কষা শুরু হয় তার পরে। অনেকের দাবি, ফুটব্রিজের ওপরেই ছিল রেলের একটা বুকিং কাউন্টার। সেটা পুড়েছে। কেউ কেউ আবার বলেছেন, পোড়েনি, জানলার কাচ ভেঙেছে।
বান্দ্রার চারটে স্টেশন পরেই এলফিনস্টন রোড। গত নবমীর সকালে যে স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৩৫ জন। আজ এক এক সময়ে অনেকের মনে হয়েছে, এ বার কি বিপর্যয় দেখবে বান্দ্রাও? শেষ পর্যন্ত ১৪৮ বছর বয়সি স্টেশনের কান ঘেঁষেই বেরিয়ে গিয়েছে আগুন।