মহিলা নিগ্রহের ঘটনা বেড়েই চলেছে উত্তরপ্রদেশে। প্রতীকী ছবি।
মাস চারেক আগে ট্রেনের মধ্যে চড়াও হয়ে তাঁর গলায় অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। গলা থেকে আওয়াজ বেরোয় না আর। সেই ক্ষত শুকোতে না শুকোতে শনিবার লখনউয়ে ফের ওই মহিলার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালাল দুষ্কৃতীরা।
গত আট বছরে এই নিয়ে চার বার অ্যাসিড আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এক বার তাঁকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টাও করে আততায়ীরা। বার বার হামলার নিশানায় থেকেও বেঁচে গিয়েছেন দুই সন্তানের মা, বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা। ইদানীং চিকিৎসার জন্য গ্রাম ছেড়ে লখনউয়ের আলিগঞ্জ এলাকায় একটি হস্টেলে থাকতেন তিনি। পাশাপাশি সেখানে অ্যাসিড আক্রান্তদের দ্বারা চালিত একটি ক্যাফেতে কাজ করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার হামলার ঠিক আগে তিনি বোতলে জল ভরতে হস্টেলের বাইরে বেরিয়েছিলেন। আর সেই সুযোগে কেউ বা কারা তাঁর দিকে অ্যাসিড ছুড়ে পালায়। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তবে মুখ ও গলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে তাঁর চিকিৎসা চলছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, বার বার হামলার ঘটনায় তিনি আতঙ্কে ভুগছেন।
বছর আটেক আগে ঘটনার সূত্রপাত। উত্তরপ্রদেশের উঞ্চাহর গ্রামে জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে গণধর্ষণের শিকার হন ওই মহিলা। বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। এই ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে। আর সেটাই তাঁর পক্ষে কাল হয়ে দাঁড়ায়। ২০০৯ সালে মহিলার উপর অ্যাসিড হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। ২০১৩ সালে ফের অ্যাসিড হানা। এর মাঝে এক বার তাঁকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টাও করা হয়। আক্রান্তের পরিবারের দাবি, আক্রোশ মেটাতে গণধর্ষণে অভিযুক্তরাই বার বার হামলা চালিয়েছে।
এই বছর ২৩ মার্চ গ্রাম থেকে লখনউ ফেরার সময় ট্রেনে তাঁর উপর ফের অ্যাসিড হামলার ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে কম জলঘোলা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান। এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য দুই সশস্ত্র রক্ষী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু শনিবারের ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। দু’জন রক্ষী থাকা সত্ত্বেও ফের অ্যাসিড হামলার ঘটনায় উঠছে গাফিলতির অভিযোগ। মার্চ মাসে অ্যাসিড হামলার পর হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করায় কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন দুই মহিলা পুলিশকর্মী। সেই ঘটনার জেরে তাঁরা সাসপেন্ড হন। কয়েক দিন আগেই উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকার ১০০ দিন পার করেছে। একের পর এক মহিলা নিগ্রহের ঘটনায় রাজ্যে মেয়েদের নিরাপত্তা নেই বলে সরকারকেই দুষছেন বিরোধীরা।