নরেন্দ্র মোদী
ব্রিক্স সম্মেলন উপলক্ষে ৩ সেপ্টেম্বর চিনের ফুজিয়ান প্রদেশের জিয়ামেনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিন দিনের এই সফরে প্রেসিডেন্ট শি জিনফিং-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও হবে। ডোকলাম সঙ্কটে আপাতত বিরতি পড়ায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রশ্নে কিছুটা খোলা মনেই আলোচনা করতে পারবেন মোদী। তবে ঘরোয়া আলোচনায় বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, ওই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ত্রিপাক্ষিক সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কথা হবে। বস্তুত ৭২ দিন ধরে চলা ডোকলাম সঙ্কটই হতে চলেছে আলোচনার মুখ্য প্রতিপাদ্য। ডোকলামকে সামনে রেখে সীমান্তবর্তী ৩টি ভূখণ্ডকে আলোচনায় নিয়ে আসতে চলেছে ভারত।
ভুটান ছাড়াও ভারত-চিন-নেপাল সীমান্তে লিপুলেখ পাস এবং ভারত-চিন-মায়ানমার সীমান্তে দীপু পাস-এ বেজিংয়ের গতিবিধি যথেষ্ট চাপে রেখেছে সাউথ ব্লককে। আসন্ন বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে শি-কে যে প্রস্তাব দেওয়া হবে তা হল, ভারত-চিন সীমান্ত আলোচনার জন্য বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ের (দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়ে গঠিত) যে মেকানিজমটি রয়েছে, তার পাশাপাশি একটি সমান্তরাল মেকানিজম তৈরি করা হোক। যার উদ্দেশ্য হবে, তিনটি এলাকায় ত্রিদেশীয় সীমান্তকে পৃথক ভাবে চিহ্নিত করে একটি পাকাপাকি সমাধান খোঁজা।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ডোকলামে হাত পোড়ানোর পরে টনক নড়েছে মোদী সরকারের। লিপুলেখ পাসের কাছে কালাপানি এলাকায় চিনের গতিবিধি এবং পরিকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সাউথ ব্লকের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট এসেছে। অন্য দিকে মায়ানমারকে সামনে রেখে ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে বেজিং — এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চিন থেকে মায়ানমারে যাবেন ৫ তারিখ। সেখানে সে দেশের সরকারি নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি তুলতে চলেছেন মোদী।
ঘটনা হলো, একসঙ্গে গোটা সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় না-বসে সমস্যার পৃথক-পৃথক ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে সমাধানসূত্র খোঁজার প্রস্তাবটি ছ’মাস আগেই দিয়েছিল চিন। কিন্তু তখন ভারত তাতে গুরুত্ব দেয়নি। চিন চাইছিল সিকিম সেক্টর নিয়ে আগে আলোচনায় বসতে। ২০১২ সালে ভারত, ভুটান এবং চিনের মধ্যে আলোচনার পর ঐকমত্য হয় যে, ওই এলাকার স্থিতাবস্থায় বদল ঘটাতে হলে আগে সংশ্লিষ্ট তিনটি দেশকে আলোচনায় বসতে হবে। কিন্তু মুখে ঐকমত্যের কথা বললেও চিন বরাবরই যুক্তি দিয়ে এসেছে যে, ১৮৯০ সালের ‘ব্রিটেন-চিন কনভেনশন’ অনুযায়ী ডোকলাম চিনের ভূখণ্ডের মধ্যেই পড়ছে। আসন্ন বৈঠকে চিনকে তার অবস্থান থেকে নরম করানোটা সাউথ ব্লকের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ এই মুহূর্তে।