গুয়াহাটিতে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে লোকনৃত্যের তালে স্কুলের ছাত্রীরা। ছবি: পিটিআই
কোথাও উদ্যাপন, কোথাও বর্জন। কোথাও আশা, কোথাও হতাশাকে সঙ্গী করে ৭২তম স্বাধীনতা দিবস পালন করল অসম তথা উত্তর-পূর্ব।
বাক্সার উপরখুঁটি গ্রামে, সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা ও ছ’ফুট চওড়া পতাকা নিয়ে প্রায় হাজার দশেক মানুষ আজ ১২ কিলোমিটার পদযাত্রা করলেন। এর আগে দেশের দীর্ঘতম জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ছিল ৩.৩ কিলোমিটার। তাই জাতীয় তো বটেই বাক্সার ওই পতাকা গিনেস বইয়েও নাম তুলবে বলে বিশ্বাস বাক্সাবাসীর। বড়োল্যান্ডের অন্তর্গত বাক্সায় আগে এনডিএফবি জঙ্গিদের হুমকিতে স্বাধীনতা দিবসে মিছিল করা দূরের কথা, জাতীয় পতাকা তুলতেও ভয় পেতেন মানুষ। নমো নমো করে হত উদ্যাপন। সেনা অভিযানে কোণঠাসা এনডিএফবির জঙ্গিরা। তাই কৃষ্ণরাজ সাংগ্রোলা, বাপন দাস, রঞ্জন শর্মাদের নেতৃত্বে মানুষ আজ বুক ফুলিয়ে গুয়াহাটি-বগামাটি পথে দেশের পতাকা নিয়ে মিছিলে সামিল হন।
একই ছবি শিলংয়েও। এএনভিসি, জিএনএলএ, এইচএনএলসি জঙ্গি সংগঠনগুলির হুমকিতে খাসি বা গারো পাহাড়ে স্বাধীনতা দিবসে উৎসব হত না। কিন্তু গত চার বছরে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। সম্প্রতি জিএনএলএ সেনাধ্যক্ষ সোহন ডি শিরা মারা যাওয়ায় এ বার জিএনএলএও ভেঙে গিয়েছে। তাই মেঘালয়ে নিশ্চিন্তে ও ধুমধাম করে পালিত হল স্বাধীনতা দিবস। শিলংয়ের পোলো মাঠ, রাজভবনে পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি ওয়ার্ডস লেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
অবশ্য মায়ানমারের অজ্ঞাত স্থানে ভারতের পতাকায় কালি মাখিয়ে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রতিবাদ জানিয়ে ছবি পাঠিয়েছে আলফা স্বাধীন। অসমের উদালগুড়িতে কড়া নিরাপত্তর মধ্যেও মিলনজ্যোতি এমই স্কুলে কালো পতাকা তোলে দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়েই পুলিশ ও শিক্ষকরা গিয়ে তা নামিয়ে ফেলেন। ঢেকিয়াজুলিতেও দুষ্কৃতীরা কালো পতাকা ওড়ায়। কোচ-রাজবংশীরা উপজাতি মর্যাদা না পাওয়ায় স্বাধীনতা দিবস বয়কট ও কমতাপুরে বন্ধ ডেকেছিল কোচ-রাজবংশী সম্মিলনী। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের আশ্বাসে ও ট্রেন অবরোধের সময়ে গ্রেফতার হওয়া ১৪ জনকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মেলায় তারা বন্ধ তুলে নেয়।
গুয়াহাটির গাঁধী মণ্ডপে আজ ৩১২ ফুট উচ্চতায় জাতীয় পতাকা ওড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু ডিব্রুগড় থেকে ক্রেন আসতে বিলম্ব, মন্দ আবহাওয়া ও পরিকাঠামোগত সমস্যায় সেই পতাকার স্তম্ভ আজ খাড়া করা যায়নি। তাই উচ্চতম পতাকা উত্তোলন সপ্তাহখানেক পিছিয়েছে।
নাগাল্যান্ডে অবশ্য ছবিটা খানিক ভিন্ন। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট ভারত স্বাধীনতা ঘোষণার আগেই নেতাজির সঙ্গী নাগা নেতা আঙ্গামি জাপু ফিজো নাগাল্যান্ডের নিজস্ব পতাকা উড়িয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেন। শুরু হয় সুদীর্ঘ সংগ্রাম। এখনও নাগা সংগঠনগুলি ১৪ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করে। এ বারেও বিভিন্ন সংগঠন নাগা স্বাধীনতা দিবসে সার্বভৌমত্বের দাবি নিয়ে সরব হয়েছে। ভারতের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালান এনএসসিএন আই-এমের সহ-সভাপতি জেনারেল খোলি সব নাগাকে একজোট হওয়ার ডাক দেন। কিন্তু নাগাল্যান্ডে বিজেপি-এনডিপিপি সরকার আজ সরকারি কর্মীদের স্বাধীনতা দিবস পালন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ জারি করেছিল। সচিবালয়ে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে সকলকে হাজির থাকতে হয়েছিল।
লাদাখে উত্তেজনার মধ্যেও ভারত ও চিনা বাহিনী আজ নাথু লা, কোংগ্রা লার পাশাপাশি অরুণাচলের বুম লা ও কিবিথু সীমান্ত পোস্টে সৌজন্য সীমান্ত বৈঠকে মিলিত হয়। পতাকা উত্তোলনের পরে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছিল প্রীতিভোজের আয়োজন।