জল্পনা চলছিলই। কিন্তু আজ সরাসরি বিদেশ মন্ত্রক জানিয়ে দিল, সার্ক শীর্ষবৈঠক চলাকালীন আলাদা করে পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক করবে না ভারত।
পাল্টা চাপ বজায় রেখেছে পাকিস্তানও। আজ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ কাঠমান্ডুতে বলেন, “দ্বিপাক্ষিক কথাবার্তা কবে শুরু হবে, তা ভারতকেই ঠিক করতে হবে। কারণ নয়াদিল্লিই এক তরফা ভাবে আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছিল।” গত অগস্ট মাসে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন পাক রাষ্ট্রদূত। তারপরেই দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করে দেয় ভারত। পাকিস্তানের বিদেশ বিষয়ক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজও জানান, ভারতের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা তাঁদের নেই। তবে প্রস্তাবটি ভারতের দিলে পাকিস্তানের বৈঠকে বসতে আপত্তি নেই। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের আজকের ঘোষণার পর স্পষ্ট হয়ে গেল, পাকিস্তান-প্রশ্নে কড়া অবস্থানই বজায় রাখছে ভারত। সূত্রের খবর, সার্ক সম্মেলনে ২৬/১১-র প্রসঙ্গ তুলে ইসলামাবাদকে আরও চাপে রাখতে চায় নয়াদিল্লি।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান থেকেই পাকিস্তান-সহ প্রতিটি পড়শি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকী, মঙ্গলবার সার্ক শীর্ষবৈঠকে যোগ দিতে কাঠমান্ডু যাওয়ার আগে সে লক্ষ্যের কথা ফের মনে করান তিনি। তবে গত ছ’মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ঠিক কতটা অবনতি হয়েছে, সে কথাও তাঁর জানা। তা ছাড়া, সার্কে সদস্যপদ পেতে আর এক প্রতিবেশী চিন যে ভাবে তৎপর, তাতেও চাপ বেড়েছে নয়াদিল্লির। এ অবস্থায় পড়শিদের সঙ্গে কী ভাবে সুসম্পর্ক তৈরি করেন মোদী, তার দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।
সার্কভুক্ত দেশগুলির প্রধানরা অবশ্য বিশেষ ভাবে তাকিয়ে ছিলেন মোদী-শরিফ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের দিকে। আজই বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে সুষমা স্বরাজ ও সরতাজ আজিজকে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। গুঞ্জন শুরু হয় ভারত-পাক বৈঠক নিয়ে। তখন অবশ্য সুষমা বিষয়টিকে ‘স্রেফ শিষ্টাচার’ বলে এড়িয়ে যান। আর সরতাজ আজিজ বলেন, “এমন কোনও পরিকল্পনা এখনও নেই। তবে অন্য পক্ষ যদি বৈঠকে উদ্যোগী হয়, তা হলে আপত্তি নেই।” একই কথা বলেন শরিফও। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের ঘোষণার পরে ১৮তম সার্ক শীর্ষবৈঠকের “শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বৃহত্তর আঞ্চলিক ঐক্য” তৈরির উদ্দেশ্য কী ভাবে রূপায়িত হবে, তা নিয়ে জোরদার সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠছে চিনের তৎপরতা শুরু হওয়ায়। নেপালের উন্নয়নের জন্য আগামী চার বছর ১৫ লক্ষ ডলারেরও বেশি খরচ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চিন। যার পর নেপালের অনেক কূটনীতিকই চিনের সদস্যপদ পাওয়ার দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছেন। পাকিস্তান যে এ ব্যাপারে চিনের পাশে রয়েছে, সে গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ভারত প্রত্যাশিত ভাবেই তা হতে দিতে চায় না। কারণ তা হলে সার্কভুক্ত দেশগুলির মধ্যে নিয়ন্ত্রকের আসনে বসবে চিন। পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে ভারতকে।
এ দিন অবশ্য সেই কূটনীতির মধ্যে ঢুকতে চাননি মোদী। নেপাল-সরকার আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েই দিন কাটিয়েছেন। দশটি চুক্তি সই করেছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে কাঠমান্ডুু-দিল্লি বাস পরিষেবার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছেন। এত দিন টাকা জাল হতে পারে এই আশঙ্কায় ১০০ টাকার বেশি অঙ্কের ভারতীয় নোট ভারত থেকে নেপালে বা নেপল থেকে ভারতে আনা যেত না। দশকব্যাপী সেই নিষেধাজ্ঞা এ দিন তুলে দেওয়া হয়। এখন থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার ভারতীয় নোট নিয়েই দু’দেশে যাওয়া আসা করা যাবে। তবে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যেতে পারবেন দু’দেশের নাগরিকই।