US

এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্স: মাথা নত করবে না দিল্লি, ওয়াশিংটনে স্পষ্ট বার্তা জয়শঙ্করের

সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও মার্কিন-আপত্তি উড়িয়ে এই নিয়ে চুক্তি নিয়ে কি শেষমেশ এগোবে ভারত? তা যদিও খোলসা করেননি জয়শঙ্কর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ১৬:৩৯
Share:

এস-৪০০ কেনার চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি আমেরিকার।

রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী এস-৪০০ প্রযুক্তি কিনতে চায় ভারত। মার্কিন সরকারকেও সেই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার এমনটাই জানালেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এই চুক্তি প্রসঙ্গে শুরু থেকেই আপত্তি তুলে আসছিল মার্কিন সরকার। কিন্তু, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার ভারতের ‘যুক্তি’ বোঝার চেষ্টা করবে বলে জয়শঙ্কর আশাবাদী।

Advertisement

গত কাল ওয়াশিংটনের ডিসির ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর একটি আলোচনাসভায় যোগ দেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী। সেখানে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কিনলে ভারতের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেন এক রুশ সাংবাদিক। জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘এস-৪০০ নিয়ে ভারত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এবং তা মার্কিন সরকারকে জানানোও হয়েছে। নিজের দৌত্য ক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আমি। এই চুক্তি আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আশা করি সকলে তা বুঝবেন।’’

সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও মার্কিন-আপত্তি উড়িয়ে এই নিয়ে চুক্তি নিয়ে কি শেষমেশ এগোবে ভারত? তা যদিও খোলসা করেননি জয়শঙ্কর। তবে কার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা হবে আর কার কাছ থেকে কেনা হবে না, সার্বভৌম দেশ হিসাবে ভারত তা নিজেই ঠিক করতে পারে বলে জানান তিনি। জয়শঙ্করের কথায়, ‘‘শুরু থেকেই বলে এসেছি, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কী সরঞ্জাম কিনব, কোথা থেকে কিনব, সার্বভৌম দেশ হিসাবে তা ঠিক করার অধিকার এবং স্বাধীনতা রয়েছে আমাদের। প্রত্যেকের সেটা বোঝা উচিত। কী সরঞ্জাম কিনব, রাশিয়ার কাছ থেকে কিনব কি না, সেটা অন্য কোনও দেশ ঠিক করে দেবে তা একেবারেই পছন্দ নয় আমাদের। একই ভাবে আমেরিকার কাছ থেকে কিছু কেনা উচিত, কি উচিত নয়, সেটাও কেউ বলে দেবে না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ৩৭০ বিলোপের পরে ভারতে জঙ্গিহানা হতে পারে, উদ্বিগ্ন অনেকে, জানাল আমেরিকা​

২০১৫ সালে প্রথম ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কেনায় আগ্রহ প্রকাশ করে ভারত। গত বছর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের সময় তা নিয়ে ৫৪৩ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে। অগ্রিম টাকা নিয়েও মাসদুয়েক আগে এক প্রস্থ আলোচনা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে খুব শীঘ্র ওই প্রযুক্তি হাতে পাবে ভারত। কিন্তু এই মুহূর্তে তাতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন ও সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন নিয়ে ওয়াশিংটন ও মস্কের মধ্যে এমনিতেই সঙ্ঘাত রয়েছে। তার মধ্যে ২০১৬-র মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়েও জলঘোলা হয়েছে বিস্তর।

এমন পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালে ‘কাউন্টারিং আমেরিকাজ অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাঙ্কশনস্ অ্যাক্ট’ (কাটসা) আইন চালু করে মার্কিন সরকার। তার আওতায় রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনলে যে কোনও দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে তারা। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের উপর নানাবিধ বিধিনিষেধ চাপাতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রভাব পড়তে পারে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও। এ বছর জুন মাসেই তুরস্ককেই এর ফল ভুগতে হয়েছিল। মার্কিন উড়িয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্রযুক্তি কেনার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায়, তাদের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রকল্প থেকে ছেঁটে ফেলে ওয়াশিংটন।

আরও পড়ুন: ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে গাঁধীজিকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন মোদীর, দেশকে প্রকাশ্য শৌচমুক্ত ঘোষণা করবেন আজ​

তাই সব দিক খতিয়ে দেখে, বুঝেশুনেই এগোতে চাইছে ভারত। কারণ জম্মু-কাশ্মীর প্রশ্ন এই মুহূর্তে মার্কিন সরকারকে পাশে দরকার। রাশিয়াকে চটালেও চলবে না। কারণ গত পাঁচ দশক ধরে ভারতকে অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম জুগিয়ে আসছে রাশিয়া। তবে ভারতের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও মার্কিন সরকার সুর নরম করতে পারে বলে ধারণা কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের যুক্তি, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ায় চিনকে চাপে রাখতে ভারতকেও সমান প্রয়োজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। তাই ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে বেগ পেতে হবে তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন