বরাইল অরণ্য পেল মহাসড়কের ছাড়পত্র

অনিশ্চয়তার অবসান। জটিলতা কাটল ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের। বালাছড়া থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার অংশের কাজ শুরু করছে এনএইচআইডিসিএল। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১৫ মার্চ দরপত্র পরীক্ষা।

Advertisement

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

অনিশ্চয়তার অবসান। জটিলতা কাটল ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের। বালাছড়া থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার অংশের কাজ শুরু করছে এনএইচআইডিসিএল। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১৫ মার্চ দরপত্র পরীক্ষা।

Advertisement

২০০৪ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের শিলান্যাস হয়েছিল। দরপত্র আহ্বান, কাজ বণ্টন, সামগ্রী সংগ্রহে কাজ শুরু হতে সময় যায় ৩-৪ বছর। এই সময় অধিকাংশ জায়গায় কাজ শেষ হয়েছে। কোথাও জোর গতিতে তা চলছে। সমস্যা ছিল কাছাড় জেলার বালাছড়া থেকে ডিমা হাসাওর হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার অংশে। ২০০৪ সালে রাজ্য সরকার বড়াইল পাহাড়ের যে অংশকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে, ওই ৩১ কিলোমিটার তার মধ্যে পড়ে যায়। ফলে বরাকবাসী আদৌ চার লেনের করিডরে যুক্ত হতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। অভয়ারণ্যের বুক চিরে করিডর যাওয়ার জন্য বন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষার দু’টি স্বয়ংশাসিত পর্ষদের ছাড়পত্র জরুরি। এত দিন তা মিলছিল না। বিভিন্ন সময় রাজ্যের মন্ত্রীরা বরাকে এসে ছাড়পত্র পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তরুণ গগৈ মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ও নানা কথা শুনিয়েছেন। এক সময় প্রস্তাব আসে, ৩১ কিলোমিটারে দুই লেন রাস্তা হোক। বাকিটা চার লেন।

কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন জানিয়েছেন, এখন চার লেনের জন্যই ছাড়পত্র মিলেছে। সে হিসেবেই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তার প্রধান দুটি শর্ত— আড়াই মাসে কাজ শেষ করতে হবে। প্রতি দিন অন্তত ৪৫০ শ্রমিককে কাজে লাগাতে হবে। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। প্রশংসা করেন মুখ্যসচিবেরও। দরপত্র আহ্বান হতেই অবশ্য রাজনীতিবিদদের কৃতিত্ব দাবি শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব সোসাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেন— ‘‘এই ছাড়পত্রের জন্য কত দিন ধরে যে লেগে ছিলাম!’’ তাঁর অনুগামীরা সে জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন।

Advertisement

এর পরই মুখ খোলেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায়। তিনি জানিয়েছেন, হেক্টর হিসেবে দেখলে জটিলতা ছিল ৮৩.৭৭৭ হেক্টর জমির। তার মধ্যে বড়াইল অভয়ারণ্যে পড়েছে ২৪.১২৭ হেক্টর। শ্রেণিবিহীন রাজ্য বনাঞ্চল ৫৯.৬৫০ হেক্টর। পুরো অংশের জন্যই জাতীয় বন সুরক্ষা পর্ষদের ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু জাতীয় বন্যপ্রাণী সুরক্ষা পর্ষদ ১২ হেক্টর জায়গা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। বিজেপি নেতৃত্বের আন্তরিকতার জন্য এর আগেই দরপত্র ডাকা গিয়েছে। ভূতল পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী তাঁদের জানিয়েছেন, রাস্তার কাজ শেষ করার জন্য সব ধরনের উপায় খুঁজে দেখা হচ্ছে।

রাজদীপবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে বড় হাতিয়ার হল, ৩০ কিলোমিটারের কম অংশে রাস্তা নির্মাণের জন্য কোনও ছাড়পত্রের প্রয়োজন নেই বলে ২০১৩ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়ে দিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘ইচ্ছাটাই বড় কথা। বাকি কাজ নিজের গতিতেই এগিয়ে যায়।’’ শিলান্যাসের সময় ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরকে বিজেপি মহাসড়ক বললে কংগ্রেস নেতা সন্তোষমোহন দেব বলেছিলেন ‘মহাধাপ্পা’— সে কথা সন্তোষ-তনয়াকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাজদীপবাবু বলেন, ‘‘এমন কৃতিত্ব দাবি হাস্যকর।’’ তিনি একে পাগলের প্রলাপ বলতেও দ্বিধা করেননি।

করিডরের বর্তমান হাল-হকিকত খতিয়ে দেখতে গত কাল পূ্র্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য গুয়াহাটি থেকে ওই পথেই শিলচর আসেন। ফিরে জানান, শিলচর থেকে সৌরাষ্ট্র পর্যন্ত মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষের সব চেয়ে বড় লাভের জায়গা, চার লেনের সড়ক ধরে দ্রুত গুয়াহাটি পৌঁছনো সম্ভব। এড়ানো যাবে মেঘালয়ের যানজট, বনধ, ধসের মতো সমস্যাগুলি। তা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা— দাবি পরিমলবাবুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement