সঙ্কট কাটাতে মাদুরোকে ডাকছে দিল্লি

আপাতত সম্পূর্ণ কোণঠাসা উগো চাভেসের উত্তরাধিকারী ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো-কে আগামী মাসে একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ দিতে চলেছে নয়াদিল্লি।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:২৯
Share:

নিকোলাস মাদুরো। ছবি: রয়টার্স।

দেশের লোক অনাহারে। মূল্যবৃদ্ধি ছুঁয়েছে ৮০০ শতাংশে! প্রায় পঞ্চাশ লাখ দেশবাসী জীবনরক্ষার তাগিদে উদ্বাস্তু হয়ে পৌঁছে গিয়েছেন পাশের দেশ কলম্বিয়ায়। মাথার উপরে ঝুলছে আর্থিক ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া। অথচ জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট— এই অভিযোগে সেনা পাঠানোর হুমকিও দিয়েছে হোয়াইট হাউস।

Advertisement

আপাতত সম্পূর্ণ কোণঠাসা উগো চাভেসের উত্তরাধিকারী ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো-কে আগামী মাসে একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ দিতে চলেছে নয়াদিল্লি। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব সৌরশক্তি সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য নিকোলাসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মোদী সরকার। ওই সম্মেলনে থাকবেন আমেরিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাও। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সৌরশক্তি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক বৈঠকও সারবেন নেতারা। সেখানে নিকোলাস মাদুরোকে বোঝানো হবে, তাঁর দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং আর্থিক ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচতে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।

নিকোলাসের শাসনকালে ৮২ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে চলে গিয়েছেন। চাভেস যখন মারা যান, তখন ১১০ ডলারে তেল বিক্রি করত সে দেশ। এখন যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৫০ ডলারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল রাজস্বহানি ঘটেছে ভেনেজুয়েলা সরকারের। সরকারি যন্ত্র ব্যবহার করে নিকোলাস বিপুল রিগিং করেছেন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য— এ কথা বারবার বলছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা। তাঁর আমলেই লিমা গোষ্ঠী (দক্ষিণ আমেরিকার ১৪টি দেশের গোষ্ঠী) থেকে ছিটকে গিয়েছে ভেনেজুয়েলা।

Advertisement

আরও পড়ুন: কমিটিতে ফিরল এয়ার ইন্ডিয়া নোট

কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, নয়াদিল্লি নিজেরই স্বার্থে আমেরিকা তথা পশ্চিম বিশ্বের সঙ্গে নিকোলাসের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছে। গত বছরের শেষেই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে ভারতে ডাকার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলে সময় নিয়ে তাঁকে ডাকা হচ্ছে। অপরিশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভেনেজুয়েলা ভারতের কাছে তৃতীয় স্থানে (সৌদি আরব এবং ইরাকের পরে)। দেশের মোট খনিজ তেলের ১১.৪ শতাংশ আসে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি থেকে।

সম্প্রতি শুধু তেল কেনা-বেচার সম্পর্ক থেকে কিছুটা এগিয়েছে ভারত এবং ভেনেজুয়েলা। ওএনজিসি-বিদেশ, আইওসি ও অয়েল ইন্ডিয়ার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বিনিয়োগ শুরু করেছে সে দেশের কারাবোডো এবং সান ক্রিস্টোবল তৈলক্ষেত্রে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ গড়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার হাত যদি শক্ত এবং স্থিতিশীল হয় তা হলে ভারতের শক্তিক্ষেত্রেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।

তবে মাদুরোর অতীতের খতিয়ান দেখে এখনই খুব বেশি আশাবাদী হতে চাইছে না ভারত। দিল্লির মাটিতে তাঁর উপরে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করে সে দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোই আপাতত লক্ষ্য সাউথ ব্লকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন