বয়স হয়েছে, জুটেছে বহু নিন্দা। তবুও সব বিতর্ক পেরিয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছে মিগ-২১ বাইসন। আকাশ যুদ্ধে তার চেয়ে অনেকটাই ফ্যালকন-১৬-কে ধ্বংস করেছে সে। বায়ুসেনাদের কাছে যা ‘উড়ন্ত কফিন’, তা-ই পাকিস্তানকে জব্দ করে দিল? কী ভাবে সম্ভব হল এটা?
নজরদারিতে থাকা ‘বৃদ্ধ’ মিগ যে ভাবে ফ্যালকন-১৬-কে তাড়া করে মেরে নামিয়েছে, তাতে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বায়ুসেনা কর্তারা।
পাকিস্তান এফ-১৬ কেনার পরেই ২০০৬ সাল থেকে মিগ-২১-এর উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। বিমানে ‘মাল্টি মোডাল’ রাডার বসানো হয়। উন্নত হয় যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবস্থাও। আঘাতের ক্ষমতা বাড়াতে রকেট, আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে জমিতে আঘাত করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হয়।
মিগ প্রথম তৈরি হয় পঞ্চাশের দশকে। ১৯৬১ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত হয় রাশিয়ার মিকোয়ান-গুরেভিচ ডিজাইন সংস্থার তৈরি ওই বিমান। সেখানে ফ্যালকন আশির দশকের। ফলে শুরু থেকেই প্রযুক্তি, গতি ও আক্রমণের প্রশ্নে অনেক এগিয়ে ফ্যালকন।
বুধবার সকাল থেকেই নজরদারির দায়িত্বে ছিল অভিনন্দনের মিগ। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার রাডারে কয়েকটি বিন্দু ফুটে ওঠে। এক ঝাঁক যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড থেকে সীমান্তের দিকে এগিয়ে এসেছিল, বোঝা যায়।
ভারতীয় বায়ুসেনার মত, জে এফ-১৭ ও মিরাজ মিলিয়ে অন্তত দেড় স্কোয়াড্রন বিমান ছিল ওই ঝাঁকে। ওই বিমানগুলি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে পৌঁছতেই তাদের সঙ্গে যোগ দেয় তিনটি ফ্যালকন-১৬ বিমান। এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কপূর বলেন, ‘‘হামলার আশঙ্কায় নজরদারি মিগের সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দেয় এক ঝাঁক সুখোই-৩০ ও মিরাজ-২০০০।’’
ভারতীয় বায়ুসেনার মত, এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী তিনটি এফ-১৬ কেবল নিয়ন্ত্রণরেখার কাছ থেকে সামরিক ছাউনিকে নিশানা করে। পাল্টা তাড়া করে ভারতীয় বায়ুসেনা। সবচেয়ে এগিয়ে ছিল অভিনন্দনের মিগ।
বায়ুসেনার দাবি, অভিনন্দন একটি এফ-১৬-কে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ‘লক’ করেন। এক বার ক্ষেপণাস্ত্র ‘লক’ করার অর্থ হল দুই বিমানের মধ্যে কোনও বাধা (যেমন পাহাড়) না এলে ক্ষেপণাস্ত্র সোজা গিয়ে আঘাত করবে নিশানা করা বিমানে।
নিশানা ‘লক’ করতেই নিজের স্ক্রিনে তা বুঝতে পারেন ফ্যালকন-১৬-এর চালক। কাশ্মীরের পাহাড়ের আড়ালের সুযোগ নিয়ে পালানো শুরু করে বিমানটি। জবাব দিতে তাড়া করে নিয়ন্ত্রণরেখা পার করে ফেলেন অভিনন্দন। ফলে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সক্রিয় হয়ে ওঠে পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স প্রযুক্তি।
পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানে ‘আকাশ থেকে আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয় তা মিগে ব্যবহৃত আর্চার শর্ট রেঞ্জ-আর ৭৩-এর থেকে অনেক আধুনিক ও নিখুঁত। অভিনন্দন দক্ষ বিমানচালক বলেই স্রেফ মিগ দিয়ে ফ্যালকনকে ধ্বংস করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন বায়ুসেনা কর্তারা।
ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে এফ-১৬ ধ্বংস করে মিগটি ভারতের দিকে ফেরার সময়ে সম্ভবত অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্ট বন্দুকের গুলির শিকার হয়। প্যারাশুটের সাহায্যে অভিনন্দন নেমে এলেও তাঁকে ধরে ফেলে পাক সেনা। ধ্বংস হয় মিগ বিমানটি।
এখনও কিছু মিগ বিমানবাহিনীতে থাকলেও, বায়ুসেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের শেষ দিক থেকেই মিগকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া হবে। পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস।