রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি পি হরিশ। ছবি: এক্স।
সাধারণ মানুষের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের কোনও ফারাক নেই পাকিস্তানে। সন্ত্রাসবাদীদের মৃত্যুতেও তাই তারা শোক পালন করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ভাষণে এমনটাই মন্তব্য করলেন ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি পি হরিশ। পাকিস্তানের আচরণকে ‘ভণ্ড’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। কী ভাবে দশকের পর দশক ধরে ভারত সীমান্তের ও পার থেকে নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হয়ে আসছে, ব্যাখ্যা করেছেন তা-ও।
সারা বিশ্বে সাধারণ মানুষ, মানবিক কর্মী, সংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তার সঙ্কট প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ একটি বিতর্কসভার আয়োজন করেছিল। নিউ ইয়র্কের দফতরে সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারত এবং পাকিস্তান, দুই দেশের প্রতিনিধিরা। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ইফতিকার আহমেদ এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রসঙ্গ তোলেন। টেনে আনেন কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কের কথাও। তার পরেই ইসলামাবাদের নীতিগুলি উল্লেখ করে তাদের কটাক্ষ করে ভারত।
ভারতের প্রতিনিধি বলেন, ‘‘কয়েকটি বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতিনিধি যে ভিত্তিহীন অভিযোগগুলি করলেন, আমাকে তার উত্তর দিতেই হচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হয়েছে ভারত। ভয়ানক ২৬/১১ মুম্বই হামলা থেকে শুরু করে অতি সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর হামলা। বরাবর পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদের বলি হয়েছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, ওদের লক্ষ্যই ছিল আমাদের উন্নয়নে, অগ্রগতিতে এবং মূল্যবোধে আঘাত করা।’’
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর ভারত প্রত্যাঘাত করে পাকিস্তানে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। টানা চার দিন সংঘর্ষ চলে নিয়ন্ত্রণরেখা এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত বরাবর। সেই ‘সিঁদুর’ অভিযানের প্রসঙ্গও রাষ্ট্রপুঞ্জের ভাষণে টেনে এনেছেন ভারতের প্রতিনিধি। কী ভাবে ভারতের হামলায় নিহত জঙ্গিদের জন্য শোক পালন করেছে পাকিস্তান, তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি আমরা দেখলাম, পাকিস্তানের পুলিশ, সেনা এবং শীর্ষ সরকারি আধিকারিকেরা কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীদের শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছেন এবং তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এমন একটা দেশ, যেখানে সাধারণ নাগরিক এবং সন্ত্রাসবাদীর মধ্যে কোনও ফারাক নেই। তাদের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলাই উচিত নয়।’’
পাকিস্তানের আচরণকে ‘ভণ্ড’ বলে উল্লেখ করে ভারতের প্রতিনিধি বলেন, ‘‘এই ধরনের আচরণের পরেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রচার করা চরম ভণ্ডামি। একটা কথা আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, রাষ্ট্রপুঞ্জের খাতায় স্বীকৃত সন্ত্রাসবাদীদের সুরক্ষার সঙ্গে সাধারণ মানুষের সুরক্ষাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে। যারা তাতে মদত দেয়, তাদের বিরুদ্ধেও একজোট হওয়া দরকার।’’