জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসনর উপত্যকা। গত এপ্রিলে এখানে হামলা চালায় জঙ্গিরা। —ফাইল চিত্র।
মায়ানমারে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে আপত্তি জানাল ভারত। রিপোর্টে মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের কথা বলতে গিয়ে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার প্রসঙ্গ টেনেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংগঠন। রিপোর্টের ওই অংশের নিন্দা জানিয়ে নয়াদিল্লি স্পষ্ট করে দিয়েছে, ওই রিপোর্টে ভারতের অবস্থানের সঠিক বিশ্লেষণ করা হয়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার তৃতীয় কমিটিতে চলতি সপ্তাহে ভারতের হয়ে বক্তৃতা করেন লোকসভার বিজেপি সাংসদ দিলীপ সাইকিয়া। সেখানেই ওই রিপোর্ট প্রসঙ্গে আপত্তি জানান তিনি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের আলোচনা সভায় সাইকিয়া জানান, ওই রিপোর্টের কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। রিপোর্টের ওই অংশকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলেও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। সাইকিয়া বলেন, “(রাষ্ট্রপুঞ্জের) বিশেষ প্রতিবেদকের এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্টতা এবং অস্পষ্ট বিশ্লেষণকে খারিজ করে আমার দেশ।” যাচাই করা হয়নি, এমন তথ্যের উপর নির্ভর না-করার জন্যও রাষ্ট্রপুঞ্জকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংস্থা মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে ১৭ পাতার একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টটি তৈরি করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ প্রতিনিধি থমাস অ্যাড্রুস। রিপোর্টের একটি অংশে তিনি লেখেন, মায়ানমারের কোনও ব্যক্তি পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় জড়িত ছিলেন না। কিন্তু গত এপ্রিলে ওই হামলার পর থেকে মায়ানমারের ‘শরণার্থী’রা ভারতে প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছেন। অ্যান্ড্রুসের দাবি, ‘শরণার্থী’রা তাঁকে জানিয়েছেন গত কয়েক মাসে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের তলব এবং আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এমনকি মায়ানমারে ‘প্রত্যর্পণের হুমকি’ও দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
রিপোর্টে ওই অংশের পরেই গত মে মাসের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ প্রতিনিধির দাবি, ওই সময় দিল্লিতে ধরা পড়া নারী, শিশু-সহ প্রায় ৪০ জন রোহিঙ্গাকে একটি সামরিক বিমানে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁদের কাছে ‘শরণার্থী শণাক্তকরণ নথি’ ছিল বলেও দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ প্রতিনিধি রিপোর্টে লিখেছেন, ওই ‘শরণার্থী’দের হাতে লাইফ জ্যাকেট ধরিয়ে মায়ানমারের দিকে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি বেশ কয়েক জন রোহিঙ্গাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের এই রিপোর্টের নিন্দা করেছেন নয়াদিল্লির প্রতিনিধি সাইকিয়া। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় তিনি স্পষ্ট করে দেন, গত এপ্রিলে পহেলগাঁও জঙ্গি হানার সঙ্গে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের জুড়ে দিয়ে যে দাবি করা হয়েছে, তার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। ভারত যে মায়ানমারে হিংসা বন্ধ করা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া, ত্রাণসামগ্রীর অবাধ বণ্টন এবং গঠনমূলক রাজনৈতিক আলোচনার পক্ষে, তা-ও স্পষ্ট করে দেন সাইকিয়া। তিনি আরও জানান, গত মার্চ মাসে ভূমিকম্পের পরে মায়ানমারে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর জন্য ‘অপারেশন ব্রহ্মা’ শুরু করেছিল ভারত।