XI Jinping-Donald Trump Meet

জিনপিঙের সঙ্গে ‘দুর্দান্ত সম্পর্ক’ চান ট্রাম্প! ছ’বছর পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে কী বললেন চিনা প্রেসিডেন্ট

শেষ বার ২০১৯ সালে মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প এবং জিনপিং। জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও চিনা প্রেসিডেন্ট জিনপিঙের সঙ্গে কোনও বৈঠক হয়নি তাঁর।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০৪
Share:

(বাঁ দিকে) চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে ‘চমৎকার সম্পর্ক’ চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছ’বছর পর বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় মুখোমুখি হলেন ট্রাম্প এবং জিনপিং। সেই সাক্ষাতের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, জিনপিং-কে সঙ্গে পেয়ে তিনি নিজেকে সম্মানিত মনে করছেন। তিনি আশাবাদী, জিনপিঙের সঙ্গে ভবিষ্যতেও সুসম্পর্ক থাকবে। একই মত চিনা প্রেসিডেন্টেরও।

Advertisement

শেষ বার ২০১৯ সালে মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প এবং জিনপিং। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। তার পর জো বাইডেনের কাছে হেরে প্রেসিডেন্টের কুর্সি ছাড়তে হয় তাঁকে। তবে আবার জিতে দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন তিনি। জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও চিনা প্রেসিডেন্ট জিনপিঙের সঙ্গে কোনও বৈঠক হয়নি তাঁর। তার মধ্যে দু’দেশের সম্পর্কের সমীকরণে নানা টানাপড়েন দেখা দেয়। সম্প্রতি শুল্ক নিয়ে যা চরমে পৌঁছেছিল। সেই আবহে দীর্ঘ ছ’বছর পর মুখোমুখি হলেন ট্রাম্প ও জিনপিং।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছেন ট্রাম্প। সেখানে চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসার কথা তাঁর। সেই বৈঠক নিয়ে আশাবাদী ট্রাম্প। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, এই বৈঠক ফলপ্রসূ হবে এবং বিশ্ব ‘দুর্দান্ত’ কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে।

Advertisement

দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেন। তিনি মনে করেন, বিশ্বের অনেক দেশই আমেরিকান পণ্যে বেশি পরিমাণ আমদানি শুল্ক নেয়। তাই সেই সব দেশের পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পথে হাঁটেন ট্রাম্প। সেই তালিকায় প্রথমের দিকেই ছিল চিন। শুল্ক নিয়ে গত কয়েক মাসে দু’দেশের মধ্যে টানাপড়েন চলেছে। শুল্ক-পাল্টা শুল্কের অস্ত্রে লড়াই চলছিল। তার মধ্যে বিরল খনিজ রফতানিতে কড়াকড়ি করে জিনপিং প্রশাসন, যা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বাদানুবাদ লেগেছিল। সেই আবহে ট্রাম্প এবং জিনপিঙের বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের মূল বিষয়ই বিরল খনিজ। বিরল খনিজের রফতানি নিয়ন্ত্রণের জন্য চিনের পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে আমেরিকা। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ‘আসিয়ান’-এর বার্ষিক সম্মেলনে চিনা আধিকারিকদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকের পর মার্কিন অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট জানান, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সমঝোতা হয়েছে।

বেসেন্ট জানিয়েছিলেন, চিনের সঙ্গে এই সমঝোতার কারণে আপাতত ১০০ শতাংশ শুল্কের হুমকি কার্যকর করা হচ্ছে না। তিনি এ-ও দাবি করেন, বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণ এবং রফতানিতে লাইসেন্স ব্যবস্থা চালু করার যে সিদ্ধান্ত বেজিং নিয়েছে, তা আরও অন্তত এক বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হবে। যদিও এখনও পর্যন্ত চিনের তরফে কিছু জানানো হয়নি। তার মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈঠকে বসতে চলেছেন ট্রাম্প এবং জিনপিং।

চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও ট্রাম্প বার বার জিনপিংকে ‘মহান মানুষ’ বলে দাবি করেছেন। তিনি এ-ও দাবি করেন, জিনপিঙের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়ান তেল ক্রয়, কৃষি, বাণিজ্য, ফেন্টাইল সঙ্কট-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। শুধু তা-ই নয়, চিন-আমেরিকার মধ্যে যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে, তা মেরামত করা সম্ভব বলেও মনে করেন ট্রাম্প।

অন্য দিকে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে আশাবাদী জিনপিং-ও। তিনি এ-ও মনে করছেন, দু’দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল হবে। কাজ করবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক দেশগুলির মধ্যে সংঘাত থাকবে, এটা স্বাভাবিক। তবে তা কী ভাবে সমাধান করা হচ্ছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’ জিনপিং চান, চুক্তি হোক দু’দেশের নিজ নিজ স্বার্থের কথা মাথায় রেখে। তাঁর দাবি, আমেরিকা এবং চিন সর্বদা মুখোমুখি হবে না, এটা স্বাভাবিক।

আসলে বাণিজ্যচুক্তি বা শুল্ক নয়, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারত এবং চিনের উপর রুষ্ট ট্রাম্প। তিনি বার বার দাবি করেছেন, তেল রফতানি করে যে লাভ করে রাশিয়া, তা ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করে। বস্তুত, বর্তমানে চিন এবং ভারতই সবচেয়ে বেশি তেল ক্রয় করে রাশিয়ার থেকে। তাই ট্রাম্প চান, এই দুই পড়শি রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করুক! দিনকয়েক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ-ও বলেছিলেন, ‘‘চিন ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাতে শুরু করেছে।’’ ট্রাম্প-জিনপিঙের বৈঠকের পর বেজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায়, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement