India US Trade Talks

চিনের পরে ভিয়েতনামের সঙ্গেও বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলল ট্রাম্প প্রশাসন! এখনও হল না ভারতের সঙ্গে, নেপথ্যে চার ‘লক্ষ্মণরেখা’?

আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলেছে ভিয়েতনামও। সমাজমাধ্যমে নিজেই এ কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে বাণিজ্য নিয়ে এখনও কোনও রফাসূত্রে পৌঁছোতে পারল না নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটন। বাণিজ্য আলোচনা এখনও চলছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ১০:৫৪
Share:

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।

চিনের পরে ভিয়েতনামের সঙ্গেও বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলল আমেরিকা। তবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বোঝাপড়ায় এখনও কোনও রফাসূত্র বেরিয়ে এল না। ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। ভারতও চাইছে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করে ফেলতে। কিন্তু ভারতের স্বার্থের সঙ্গে কোনও আপস করতে চাইছে না নয়াদিল্লির বাণিজ্য প্রতিনিধিদল।

Advertisement

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ কিছু ‘বড় লক্ষ্মণরেখা’র কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ওই ‘বড় লক্ষ্মণরেখা’গুলির মধ্যে রয়েছে কৃষি এবং দুগ্ধজাত ক্ষেত্র। নির্মলা এ বিষয়ে বিশদ কোনও মন্তব্য না করলেও বেশ কিছু পণ্যের আমদানির উপর ভারতের আংশিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার কিছু পণ্যের উপর শুল্কের হার অনেকটা বেশি। এগুলির মধ্যে এমনও বেশ কিছু পণ্য আছে, যা বিশ্ববাজারে রফতানিতে আমেরিকা প্রথম সারিতে রয়েছে। সেগুলি বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনে মোট চারটি ‘লক্ষ্মণরেখা’র কথা উল্লেখ করা রয়েছে— ভুট্টা, ইথানল, সয়াবিন এবং দুগ্ধ।

বিশ্বে ভুট্টা চাষ এবং রফতানিকারক দেশগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আমেরিকায় মোট ৩৭ কোটি ৭৬ লক্ষ টন ভুট্টা চাষ হয়েছে আমেরিকায়। তবে আমেরিকায় চাষ হওয়া ভুট্টার প্রায় ৯৪ শতাংশই জিনগত ভাবে পরিবর্তিত শস্যদানা। বিভিন্ন আগাছানাশক এবং পোকামাকড়ের উৎপাত থেকে শস্যকে রক্ষা করার জন্য এই ভুট্টাদানা বিশেষ ভাবে তৈরি। স্বল্প পরিমাণে (৫০০ কেজি) ভুট্টা আমদানির ক্ষেত্রে ভারতে ১৫ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হয়। কিন্তু আমদানির পরিমাণ এর থেকে বেড়ে গেলে শুল্ক বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫০ শতাংশ। তবে জিনগত ভাবে পরিবর্তিত শস্যদানা আমদানি বা চাষের অনুমতি দেওয়া হয় না ভারতে। ট্রাম্পের প্রশাসন চাইছে এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালাতে। তবে সামনেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশের পরেই বিহার হল ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ভুট্টা উৎপাদনকারী রাজ্য। সে ক্ষেত্রে জিনগত ভাবে পরিবর্তিত শস্যদানা আমদানিতে ভারত রাজি হয়ে গেলে, বিহারের ভোটের আগে ধাক্কা খেতে পারে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট।

Advertisement

ভুট্টার মতো ইথানল উৎপাদন এবং রফতানির ক্ষেত্রেও বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। ২০২৪ সালে তারা ৪৩০ কোটি ডলারের ইথানল রফতানি করেছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকার কাছে কানাডা এবং ব্রিটেনের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম বাজার হল ভারত। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ভারত ইথানল আমদানির অনুমতি দেয়। যেমন, অ্যালকোহল ভিত্তিক রাসায়নিক, ওষুধ বা পানীয় তৈরির ক্ষেত্রে এটি আমদানি করা যায়। কিন্তু জ্বালানি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য এটি আমদানি করা যায় না ভারতে। অর্থাৎ, এ দেশে পেট্রল বা ডিজ়েলের সঙ্গে মেশানো যায় না ইথানলকে। দাবি করা হচ্ছে, ভারতে ইথানলের বাজারকে আরও সম্প্রসারিত করতে চাইছে আমেরিকা।

সয়াবিন উৎপাদন এবং রফতানির ক্ষেত্রে ব্রাজিলের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমেরিকা। দুই দেশেই জিনগত ভাবে পরিবর্তিত শস্যদানা ব্যবহৃত হয়। ভারতে এই ধরনের সয়াবিন আমদানি নিষিদ্ধ। তবে জিনগত ভাবে পরিবর্তিত শস্যদানার সয়াবিন তেল আমদানি করা যায়। কারণ, জিনগত ভাবে পরিবর্তিত হওয়া প্রোটিন শুধুমাত্র কাঁচা সয়াবিনেই থাকে। সয়াবিন তেলে তা থাকে না। আবার দুগ্ধজাত পণ্য রফতানিতেও অন্যতম প্রথম সারির দেশ আমেরিকা। বর্তমানে ভারতে দুগ্ধজাত বেশ কিছু পণ্যের আমদানিতে চড়া শুল্ক নেওয়া হয়। চিজ়ের উপর ৩০ শতাংশ শুল্ক, মাখনের উপর ৪০ শতাংশ শুল্ক এবং মিল্ক পাউডারের উপর ৬০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।

সম্প্রতি মার্কিন সাময়িকপত্র ‘নিউজ়উইক’-এ ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। এটি ‘অত্যন্ত জটিল’ বাণিজ্য আলোচনা বলেই মনে করছেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই জটিল বাণিজ্য আলোচনার মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছি। হয়তো মাঝামাঝির থেকেও বেশি এগিয়ে গিয়েছি। আমি অবশ্যই আশা করব যে, এই আলোচনা সফল হবে এবং আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছোব। তবে আমি নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারি না। কারণ, আলোচনায় আরও একটি পক্ষ রয়েছে।” তবে আলোচনার মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত হওয়া সম্ভব বলে আশাবাদী বিদেশমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতি কী হয়, সে দিকে নজর রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।

গত ২ এপ্রিল ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ হারে শুল্ক চাপানোর কথা বলেছিলেন তিনি। তবে পরবর্তী সময়ে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখেন। আগামী ৯ জুলাই ওই ৯০ দিনের সময়সীমার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলেছে আমেরিকা। ওই সময়েই ট্রাম্প বলেছিলেন, এর পরে সম্ভবত ভারতের সঙ্গেও চুক্তি সেরে ফেলবে তাঁর প্রশাসন। তবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এরই মধ্যে বুধবার ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলেছে আমেরিকা। সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্সে’র প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভিয়েতনামে বিনা শুল্কে প্রবেশ করতে পারবে মার্কিন পণ্য। আমেরিকাও ভিয়েতনামের অনেকগুলি পণ্যের উপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও চুক্তির বিষয়ে বিশদ তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement