চর সন্দেহে বহিষ্কার করা হয়েছে দিল্লির পাক হাই কমিশনের ১৭ জন কর্মীকে। তদন্তকারীদের বক্তব্য পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ওই কর্মীদের কূটনৈতিক রক্ষাকবচ দিয়ে চর হিসাবে কাজ করতে ভারতে পাঠিয়েছিল। পাল্টা পদক্ষেপে ইসলামাবাদের ভারতীয় হাই কমিশনের সম সংখ্যক কর্মীকেও দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে নওয়াজ প্রশাসন।
কূটনীতির এই পারস্পরিক চোখ-রাঙানির মধ্যেই আজ নবনিযু্ক্ত সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত ঘোষণা করেছেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে নষ্ট করে দেওয়া লঞ্চ প্যাডগুলিতে জঙ্গিরা ফের তৎপর হচ্ছে। সুতরাং প্রয়োজনে ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাতে পারে ভারত। বিএসএফের দাবি, আজ রাত ৯টা নাগাদ জম্মুর সাম্বা সেক্টরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করে চার-ছ’জন জঙ্গির একটি দল। ভারতীয় বাহিনীর টহলদারি দলের সঙ্গে গুলি-বিনিময়ের পরে পিছু হটে তারা। একটি অজ্ঞাতপরিচয় দেহ দেখেছে সেনা। তল্লাশি চলছে। সব মিলিয়ে পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে হিসেব কষেই পাকিস্তান প্রশ্নে ফের সুর চড়াতে শুরু করল কেন্দ্র।
ঘটনার শুরু গত অক্টোবরে দিল্লি চিড়িয়াখানায়। পশ্চিম উপকূলে বিএসএফের গতিবিধি ও ঘাঁটি সংক্রান্ত তথ্য ও মানচিত্র নিতে গিয়ে দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মেহমুদ আখতার নামে এক ব্যক্তি। জানা যায়, পাক সেনার বালুচ রেজিমেন্টের ওই জওয়ান আইএসআইয়ের চর হিসাবে দিল্লির পাক হাই কমিশনে ভিসা দফতরে কর্মরত রয়েছেন। তদন্তে দিল্লি পুলিশকে ওই ব্যক্তি জানান, এ দেশে বিএসএফ ও সেনাদের ঘাঁটি ও তাদের গতিবিধির তথ্য জোগাড়ের দায়িত্ব দিয়েছিল আইএসআই। গোপন তথ্য পাচারকারীদের খুশি করতে যথেচ্ছ টাকা ছড়ানোর পাশাপাশি ‘হানি ট্র্যাপ’-করেও তাদের ফাঁদে ফেলত সে। তদন্তে জানা যায়, বিএসএফের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পশ্চিম উপকূলে ফের একটি ২৬/১১-র ধাঁচে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিচ্ছিল আইএসআই।
এর পর তদন্তের দায়িত্ব নেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তদন্তে দেখা যায় চরবৃত্তির শিকড় রয়েছে পাক হাই কমিশনের গভীরে। প্রথমে মেহমুদ আখতার ও পাক দূতাবাসের ছয় কর্মীকে চরবৃত্তির অভিযোগে গত নভেম্বরে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। তার পর ডিসেম্বর ও এ মাসে ধাপে ধাপে আরও ১০ জনকে ওই একই অভিযোগে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাল্টা পদক্ষেপ করে পাকিস্তানও। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনে কর্মরত ১৭ জনের বিরুদ্ধেই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে নয়াদিল্লিকে দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে ভাবে দিল্লির পাক হাই কমিশনে কর্মরতদের দেশ ছাড়তে বলা কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বিরোধী।
এরই মধ্যে আজ নিজের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে হুঙ্কার ছেড়ে রাওয়াত জানিয়েছেন, সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণে দরকার পড়লে ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাবে ভারত। কাশ্মীরের ছায়াযুদ্ধ থামিয়ে ১৯৮৯-এর আগের পরিস্থিতি ফেরানোই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হবে।
অনেকেই বলছেন, রাওয়াত যে ভাবে আজ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সরব হন তার পিছনে সরকারের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। কেননা, গত সপ্তাহে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন অমিত শাহ। সুতরাং এক দিকে সেনা অন্য দিকে দল— সর্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রশ্নে উভয় শিবিরকে এ ভাবে সরব হতে দেখে মনে করা হচ্ছে, পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই মেরুকরণের উদ্দেশ্যে এ ভাবে পাকিস্তান প্রশ্নে সুর চড়াচ্ছে বিজেপি।