বিভূতি লহকর। নিজস্ব চিত্র।
আইইউসিএন-এর ‘হেরিটেজ হিরো’ পুরস্কার জিতে নিলেন আরণ্যকের তৃণভূমি বিশেষজ্ঞ বিভূতি লহকর। এ দিন আমেরিকার হাওয়াইতে বিশ্ব সংরক্ষণ কংগ্রেসের অধিবেশনে অনলাইন ভোট গণনার পরে হেরিটেজ হিরো হিসেবে অসমের বিভূতিবাবুর নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি হলেন প্রথম অসমিয়া, যিনি এই সম্মান পেলেন।
বিশ্বে মাত্র পাঁচ জন আর এশিয়ার মধ্যে একমাত্র সংরক্ষণকর্মী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। মানস জাতীয় উদ্যানে কাজ করা এই তৃণভূমি বিশেষজ্ঞকে এ বছরের হেরিটেজ হিরোর চূড়ান্ত তালিকায় মনোনীত করেছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার’ বা ‘আইইউসিএন’।
বিভূতিবাবু ও তাঁর স্ত্রী নমিতা ব্রহ্ম দু’জনেই দীর্ঘদিন ধরে আরণ্যক সংগঠনের হয়ে মানসে কাজ করছেন। পেয়েছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের পাশাপাশি এখন স্থানীয় মানুষকে নিয়ে বিকল্প রোজগারের বিভিন্ন পন্থাও খুঁজে বের করতে ব্যস্ত তিনি ও তাঁর স্ত্রী। পানবাড়ি রেঞ্জে আশপাশের গ্রামবাসীদের নিয়ে তৈরি করছেন একটি নার্সারি।
এ বছর ‘হেরিটেজ হিরো’ পুরস্কারের জন্য সারা পৃথিবী থেকে নাম উঠে এসেছিল। সেখান থেকে বাছাইয়ের পর 'আইইউসিএন ওয়ার্ল্ড কমিশন অন প্রোটেকটেড এরিয়াস' চূড়ান্ত তালিকায় রেখেছিল বিভূতিবাবু, কঙ্গোর ভিরুঙ্গা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষণের কাজ করা বান্টু লুকাম্বো ও যোশুয়া কাম্বাসু মুকুরা, পশ্চিম ককেশাসে সংরক্ষণের কাজ করা ইউলিয়া নাবেরেজানায়া ও অ্যান্ড্রে রুদোমাখাকে। অরণ্য ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে প্রাণের ঝুঁকি সত্বেও কাজ করে যাওয়া সংরক্ষণকর্মীদের স্বীকৃতি দিতেই এই পুরস্কার দেয় আইইউসিএন।
আরও পড়ুন: নজরদারিতে ভুলের ফাঁকেই বেলাইন রেল
বিভূতিবাবু এ দিন পুরস্কার পাওয়ার পর বলেন, “মানসই আমায় সব দিয়েছে। তাই এই পুরস্কারও মানসেরই প্রাপ্য।”
পরিবেশপ্রেমীদের মতে, সংরক্ষণ ক্ষেত্রে প্রাণীদের গুরুত্ব বেশি, অর্থব্যয়ও বেশি। কিন্তু গন্ডারসহ বিভিন্ন প্রাণীর অস্তিত্বরক্ষায় তৃণভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে মানস জাতীয় উদ্যানে বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির যে পিগমি হগ, হিসপিড হেয়ার, বেঙ্গল ফ্লোরিকান পাওয়া যায়, তারা একান্তই তৃণভূমি নির্ভর। তাই তৃণভূমির ক্ষতি হলে বা প্রকৃতি বদল হলে তার নেতিবাচক প্রভাব প্রথমে তফশিলভুক্ত প্রাণীদের উপরে পড়বেই। ব্রহ্মপুত্র ও বেকি উপত্যকায় তৃণভূমির গবেষণা ও সংরক্ষণ নিয়ে বিভূতিবাবুর কাজ তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও বনমন্ত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম বিভূতিবাবুকে অভিনন্দন জানান। রাজ্যের সংরক্ষণ উদ্যোগ ও মানস জাতীয় উদ্যানের কথা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য বিভূতিবাবু ও তাঁর সংগঠনকে ধন্যবাদ জানান তাঁরা।