—প্রতীকী ছবি।
লাগাতার সাইবার হানার শিকার হচ্ছে ভারত। সাইবার হানা চলছে মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচ দেশ থেকে। এর জেরে গত পাঁচ মাসে খোয়া গিয়েছে অন্তত সাত হাজার কোটি টাকা! অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নথি অনুযায়ী, এমনই তথ্য মিলেছে বলে জানাল সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ (আইফোরসি) থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, মূলত মায়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস এবং তাইল্যান্ড থেকে এই ধরনের সাইবার হানা হয়ে চলেছে দেশে। এতে চিনা অপারেটরদের হাত রয়েছে। এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১১৯২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল সাইবার প্রতারকেরা। ফেব্রুয়ারি মাসে খোয়া গিয়েছে ৯৫১ কোটি টাকা। মার্চে ১০০০ কোটি, এপ্রিলে ৭৩১ কোটি এবং মে মাসে ৯৯৯ কোটি হাতানো হয়েছে।’’
তদন্তে দেখা গিয়েছে, মূলত শেয়ার বাজারে স্টক ট্রেডিং এবং ডিজিটাল গ্রেফতারির মাধ্যমে টাকা হাতিয়েছে প্রতারকেরা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, সাইবার হামলাকারীদের একটা বড় অংশ ভারতীয় বলেও জানিয়েছে সরকারি নথি। দাবি, ওই ভারতীয়েরা পাচারচক্রের শিকার। এখন তাঁদের কোনও উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন এলাকায় বন্দি করে এই কাজে বাধ্য করা হচ্ছে।
এ রকম বেশ কিছু ঘাঁটির হদিসও সরকার পেয়েছে বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন এক সরকারি আধিকারিক। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি দিল্লিতে কম্বোডিয়ার সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কেন্দ্রের বৈঠক হয়েছিল। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বিদেশ মন্ত্রক আয়োজিত সেই বৈঠকে কম্বোডিয়ার আধিকারিকেরা কেন্দ্রের কাছে সাইবার হামলাকারীদের ঘাঁটিগুলির অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন, যাতে তাঁরা পদক্ষেপ করতে পারেন।
ওই কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘গোয়েন্দাদের তৎপরতায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন ভারতীয়কে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের বয়ান থেকে কম্বোডিয়ায় সাইবার হামলাকারীদের ৪৫টি, লাওসে পাঁচটি এবং মায়ানমারে একটি ঘাঁটি চিহ্নিত করা গিয়েছে। শুধু ভারতীয়রাই নন, এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকেও বহু মানুষকে পাচার করে এনে এই কাজ করানো হয়।’’
সরকারি নথি বলছে, সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন ‘এজেন্ট’কে চিহ্নিত করেছে, যাঁরা পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত। মূলত মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লি থেকে বিভিন্ন মানুষকে প্রচুর টাকা রোজগারের প্রলোভন দেখিয়ে লাওস, মায়ানমার এবং কম্বোডিয়ায় নিয়ে যান ওই ‘এজেন্ট’রা। পরে তাঁদের বন্দি করে সাইবার প্রতারণাচক্রে জড়িয়ে ফেলা হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কম্বোডিয়া থেকে উদ্ধার হওয়া ভারতীয়েরা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রথমে দুবাইয়ে পাঠানো হয়েছিল। পরে সেখান থেকে চিন হয়ে কম্বোডিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, জয়পুর থেকেই অনেককে তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।