প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
টানা ছ’দিন। এখনও উড়ান সঙ্কট কাটল না ইন্ডিগোর। রবিবারেও দিল্লি এবং মুম্বই বিমানবন্দর থেকে ২২০টি উড়ান বাতিল করল বিমান সংস্থাটি। সূত্রের খবর, মুম্বই বিমানবন্দর থেকে বাতিল হয়েছে ইন্ডিগোর ১১২টি উড়ান এবং দিল্লি থেকে বাতিল হয়েছে ১০৯টি। ইন্ডিগো জানিয়েছে, রবিবার মোট ৬৫০টি উড়ান বাতিল হয়েছে। তবে ১,৬৫০টি নির্ধারিত সূচি মেনেই চলছে। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদী ইন্ডিগো।
কেন এই সঙ্কট, তা জানতে চেয়ে বিমান সংস্থাকে শনিবার নোটিস দিয়েছিল কেন্দ্র। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই জবাব দিতে বলা হয়েছে। তার পর রবিবারই বিমান সংস্থার তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বোর্ড অফ ডিরেক্টর সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসেছিল। বোর্ডের সদস্যদের কাছে গোটা ঘটনাটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কী ভাবে সঙ্কট কাটানো যায় তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে। রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। ম্যানেজমেন্টের তরফে প্রতি দিন সেই গ্রুপের কাছে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। ইন্ডিগোর মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই বৈঠকের মূল লক্ষ্যই ছিল কী ভাবে সঙ্কট কাটানো যায় এবং কত দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে বার হওয়া যায়।
ইন্ডিগো বিপর্যয়ের জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের মূল্য চোকাতে হবে! শনিবার হুঁশিয়ারি দেন কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। তাঁর কথায়, “আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। কোথায় গলদ ছিল এবং তার জন্য কে দায়ী ছিল, ওই কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। আমরা ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে চলেছি। তাই যাঁরা এটার (ইন্ডিগো বিভ্রাট) জন্য দায়ী, তাঁদের এর মূল্য চোকাতে হবে।” ইন্ডিগো সংস্থার সিইও পিটার এলবার্সকে শো কজ় নোটিস পাঠিয়েছে ডিজিসিএ। ইন্ডিগোর বিপর্যয়ের জন্য তাঁকে দায়ী করা হয়েছে। নয়া বিধি সম্পর্কে অবগত থাকার পরেও কেন ‘পর্যাপ্ত’ পদক্ষেপ করেনি বিমান সংস্থা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইন্ডিগো বিপর্যয়ের মূল কারণ কেন্দ্রেরই বিধি বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময় এবং বিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল দেশের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ নামের ওই বিধি ১ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছে ইন্ডিগো। এই নিয়মবিধি মেনে উড়ান পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছিল না তাদের। অন্য বিমান সংস্থাগুলির তুলনায় কিছুটা সস্তায় যাত্রীদের উড়ান পরিষেবা দিয়ে থাকে ইন্ডিগো। তাদের অনেক বিমানই রাতে অবতরণ করে। তাই নয়া বিধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এই বিমানসংস্থাই। নয়া বিধি মেনে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যত সংখ্যক কর্মী এবং পাইলট প্রয়োজন, বর্তমানে তা ইন্ডিগোর নেই। ফলে চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যার জেরে যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।
পর পর পাঁচ দিন ধরে ইন্ডিগোর একের পর এক উড়ান বাতিল হওয়া নিয়ে শনিবার বিভিন্ন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তা এবং ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্সের সঙ্গে দিল্লিতে একটি জরুরি বৈঠকে বসেন কেন্দ্রের অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। অসামরিক বিমান পরিবহণসচিব সমীরকুমার সিংহ এবং ডিজিসিএ-র প্রধান ফৈজ় আহমেদ কিদওয়াই-ও উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে। বৈঠকের পরেই ইন্ডিগোর সিইও-কে শো কজ় নোটিস পাঠায় ডিজিসিএ। নোটিসে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এই পরিস্থিতির জন্য তিনিও দায়ী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে শো কজ়ের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।