চেয়ারেও প্রাণায়ম শিলচরের শিবিরে

‘কাল ছিল ডাল খালি, আজ ফুলে যায় ভরে’— কবির এই পংক্তির বিপরীত ছবি দেখা গেল কেশব স্মারক সংস্কৃতি সুরভি ও পতঞ্জলি যোগ সমিতির দু’দিনের যোগ শিবিরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৪:০৩
Share:

বিশ্ব যোগ দিবসে সামিল বরাক।

‘কাল ছিল ডাল খালি, আজ ফুলে যায় ভরে’— কবির এই পংক্তির বিপরীত ছবি দেখা গেল কেশব স্মারক সংস্কৃতি সুরভি ও পতঞ্জলি যোগ সমিতির দু’দিনের যোগ শিবিরে।

Advertisement

গত কাল রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য ওই শিবিরের উদ্বোধন করেছিলেন। গুরুচরণ কলেজের প্রেক্ষাগৃহে জায়গা দেওয়া যাচ্ছিল না দর্শক-শ্রোতাদের। কিন্তু আজ আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে ফাঁকাই পড়ে থাকল ওই একই প্রেক্ষাগৃহ। হাতেগোণা কয়েক জন যোগ-প্রাণায়াম দেখলেন। বক্তৃতা শুনলেন। যাঁরা আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে নিজে কিছু করতে আগ্রহী ছিলেন, তাঁদের চেয়ারে বসেই সারতে হল কপালভাতি, অনুলোম-বিলোম। উপস্থিতি নিয়ে অবশ্য আয়োজকদের আক্ষেপ নেই। তাঁদের ব্যাখ্যা, আজ জায়গায় জায়গায় যোগ দিবসের অনুষ্ঠান হচ্ছে। যে যার সুবিধা মতো জায়গায় গিয়েছেন।

এ দিন সকাল থেকে শিলচরে নানা কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করা হয়। জেলা প্রশাসনের তরফে যোগ-শিবিরের আয়োজন করা হয় শিলচর শিশু উদ্যানে। বিভিন্ন বিভাগের কর্তা-কর্মীরা তাতে অংশ নেন। ছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরাও। জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন সেখানে ব্যায়াম-প্রাণায়াম করেন। পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর বয়সের দরুন ঝুঁকি নিতে চাননি। তবে যোগ-শিবিরে অন্যদের উৎসাহিত করেন তিনি। ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক বরেণ্যকুমার দাস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মৃদুলকুমার নাথ, স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা সুদীপজ্যোতি দাস, জনসংযোগ দফতরের উপঅধিকর্তা ডিপি দেওরি।

Advertisement

এনসিসি ও নেহরু যুব কেন্দ্রের উদ্যোগে যোগ প্রদর্শিত হয় শিলচর রেল স্টেশনে। নরসিংটোলার মাঠে বিজেপির শিলচর শহর কমিটি দু’ঘণ্টার অনুষ্ঠান করে। বিবেক বাহিনী শহর পরিক্রমা করে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করে। কাছাড় জেলার প্রতিটি ব্লকে গিয়ে তারা যোগ-প্রদর্শন ও আলোচনা করে। গাঁধীভবনে হয় যোগাসন প্রতিযোগিতা। কাটিগড়াতেও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অর্কিড’-সহ বিভিন্ন সংগঠন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করে।

কেশব স্মারক সংস্কৃতি সুরভির সজল দেব বলেন, ‘‘শহরজুড়ে এত অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমাদের এখানে কম দর্শক আসায় দুঃখ নেই। বরং জায়গায় জায়গায় দিনটি পালিত হয়েছে, সেটাই আনন্দের কথা।’’ ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শিলচর এনআইটি-র ডিরেক্টর এন ভি দেশপান্ডে তাঁর প্রতিষ্ঠানে একটি স্থায়ী যোগ শিবির তৈরির অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘‘উচ্চ রক্তচাপ, মধুমেহ নিজে থেকে কাউকে আক্রমণ করে না। আমরা তাদের আমাদের দেহে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসি। জীবনযাপনে শৃঙ্খলা থাকলে সে সব ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবে না।’’ সে জন্য নিয়মিত প্রাণায়মের পরামর্শ দেন তিনি। তাঁর ইচ্ছে— ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তে ছেলেমেয়েরাও যোগাসনে অভ্যস্ত হয়ে উঠুক। পতঞ্জলি যোগ সমিতির সভাপতি সুকুমার নাথ এনআইটি-তে সপ্তাহে এক দিন নিয়মিত শিবির করার আশ্বাস দেন। কাছাড় জেলা শিল্প বিরোধ ট্রাইব্যুনালের সভাপতি এ এন ঘোষ এবং জ্যোৎস্নাময় চক্রবর্তীও যোগাসন নিয়ে বক্তৃতা দেন।

দেশের অন্য প্রান্তের মতো করিমগঞ্জ, ডিমা হাসাওয়েও পালিত হল বিশ্ব যোগ দিবস। করিমগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কুশিয়ারা নদীর তীরে স্টিমারঘাটে যোগ শিবির বসে। স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন করিমগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী প্রভাসানন্দ। বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য ছাড়াও অসম পুলিশ এবং সিআরপি জওয়ানরা তাতে সামিল হন। জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতর, বিজেপি, আইনজীবী সংস্থাও যোগ দিবস পালন করে। এ দিন শহরের একটি স্কুলের তরফে মিছিল বের করা হয়।

ডিমা হাসাওয়ে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের সিইএম দেবজিৎ থাওসেন। আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষ্যে হাফলং সাংস্কৃতিক ভবনে যোগ শিবিরে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যোগ সাধনা আমাদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য। আমরা তা ভুলতে বসেছিলাম।’’ ডিমা হাসাওয়ের জেলাশাসক জুরি ফুকনও ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।

যোগ দিবসে হাফলং পতঞ্জলি পীঠ জগন্নাথ মন্দির, কালীবাড়ি প্রাঙ্গন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ সেবা সমিতি, নেহরু যুবকেন্দ্র, হাফলং সরকারি উচ্চতর বালক বিদ্যালয়, ৪৩ আসাম রাইফেলস শিবিরে যোগাসনে বসেন অনেকে।

শিলচরের শিশু উদ্যান করিমগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, করিমগঞ্জের জেলা পরিষদে
ব্যায়ামে মাতলেন আট থেকে আশির মানুষ। ছবি: স্বপন রায় ও শীর্ষেন্দু শী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন