নিহত স্বপন দে।
ছাঁট লোহার কারবারিদের রোষেই মোগলসরাই রেল ইয়ার্ডে প্রাণ দিতে হয়েছে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার স্বপন দে’কে। আর এই লোহা মাফিয়ার সঙ্গে রেলকর্মীদের একাংশের জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছে মোগলসরাই পুলিশ। এর পিছনে রাজনৈতিক যোগসাজশের ইঙ্গিতও পান তাঁরা। স্বপনবাবুর সহকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ও তাঁর মোবাইল খতিয়ে দেখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে আভাস মিলেছে।
চান্দৌলি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবেন্দ্রনাথ দুবে আজ বলেন, ‘‘লোহা কারবারিদের জড়িত থাকার সম্ভবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না। সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত হচ্ছে। স্বপনবাবুকে হত্যার পিছনে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা যে ছিল, তা স্পষ্ট।’’ পুলিশ কর্তাদের আশ্বাস, শীঘ্রই অপরাধীকে গ্রেফতার করা হবে। তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু মোগলসরাইয়ে ওয়াগন সারাইয়ের ‘ওয়ার্কশপ’ তৈরির ছাড়পত্র দেন। ওয়াগন সারাইয়ের বরাত পায় রেলেরই অধিগৃহীত পরে রুগ্ণ সংস্থা বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সেই কাজের বরাত দেয় বিবাদী বাগ এলাকার বাঙালি সংস্থা, টুয়াম্যান ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে। ২০১৫-য় ওই সংস্থার তরফে মোগলসরাইয়ে আসেন স্বপনবাবু।
পূর্ব-মধ্য রেলের সব ডিভিশনের ওয়াগন সারাইয়ের জন্য পাঠানো হত মোগলসরাইয়ের মালগুদাম ইয়ার্ডে। রেলের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াগন সারাই করতে গিয়ে এখানে মাসে প্রায় ৫০ লক্ষ টন ছাঁট বার হত। তা নিয়ে লোহা কারবারিদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথমে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগই দেখতেন স্বপনবাবু। পরে সংস্থা প্রশাসনিক দায়িত্বও দেয় তাঁকে। ইয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা পটনার বাসিন্দা রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করতেন দাদা। সকলকে সম্মান করতেন। কারও সঙ্গে কোনও গোলমাল ছিল না তাঁর। তবে নিয়মের বাইরে কখনওই যেতেন না। তেমন মানুষই ছিলেন না।’’
আরও পড়ুন: জ্যোতিষ আস্থায় আজ আস্থা ভোটে কুমার
টুয়াম্যান কোম্পানি ওয়াগনের কাজের জন্য স্থানীয় কয়েকটি সংস্থাকে নিয়োগ করে। এমনই একটি সংস্থার মালিক দীপক সিংহকে ইতিমধ্যেই পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওয়াগন কেটে ছাঁট বের করাতে নিজের কর্মীদের নির্দেশ দেন দীপক। তা নিয়েই স্বপনবাবুর সঙ্গে একাধিকবার কথা কাটাকাটিও হয় তাঁর। স্ত্রীকে স্বপনবাবু ঘটনাটি বলেছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
১৭ এপ্রিল কলকাতায় নেতাজি সুভাষ রোডের সদর দফতরে যান স্বপনবাবু। দুপুরে সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে দীপক ও তাঁর দলবলের কথা জানান তিনি। পুলিশ জেনেছে, এ বিষয়ে কোম্পানির অ্যাকাউন্টস বিভাগের এক কর্মীর মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ জানান। ছাঁট লোহার লভ্যাংশে তিনি যে উৎসাহী নন, তা জানিয়ে মোগলসরাই থেকে বদলির আর্জিও জানান। একই অভিযোগ করেন ই-মেলেও। তবে সংস্থার স্বার্থেই কর্তারা তাঁকে মোগলসরাই থেকে সরাতে চাননি।