বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার ভাবনা কেন্দ্রের। —ফাইল চিত্র।
সংসদের বাদল অধিবেশনে বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনতে পারে কেন্দ্র। এর জন্য সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের তরফে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবের তোড়জোড় শুরু হতেই বিচারপতি বর্মাকে নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি সূত্রের ভিত্তিতে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, এ অবস্থায় ইমপিচমেন্টের সম্ভাবনা এড়াতে নিজে থেকে ইস্তফা দেওয়াই হয়ত বিচারপতি বর্মার জন্য একমাত্র পথ।
সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ এবং অপসারণের পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আধিকারিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে পিটিআই। তাঁরা জানান, সংসদের যে কোনও কক্ষে সাংসদদের সামনে নিজের যুক্তি তুলে ধরার সময় বিচারপতি বর্মা চাইলে নিজের ইস্তফার কথা ঘোষণা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর মৌখিক বিবৃতিই ইস্তফা হিসাবে বিবেচিত হবে। তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হিসাবে পেনশন এবং অন্য সুবিধা পাবেন। কিন্তু সংসদ থেকে তাঁকে অপসারিত করা হলে তিনি পেনশন এবং অন্য সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে জানান ওই আধিকারিকেরা।
পিটিআই জানিয়েছে, সংবিধানের ২১৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাই কোর্টের কোনও বিচারপতি লিখিত ভাবে রাষ্ট্রপতিকে নিজের ইস্তফার কথা জানানো পারেন। এ ক্ষেত্রে একটি ইস্তফাপত্রই যথেষ্ট। বিচারপতিদের ইস্তফায় কোনও অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। এ ক্ষেত্রে ইস্তফাপত্রে নিজের শেষ কর্মদিবসের কথা উল্লেখ করতে পারেন বিচারপতি। আবার চাইলে শেষ কর্মদিবসের আগে ইস্তফাপত্র প্রত্যাহারও করতে পারেন তিনি। এ ছাড়া দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি হল, সংসদ দ্বারা বিচারপতির অপসারণ বা ইমপিচমেন্ট।
এর আগে সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছিল, যদি বিচারপতি বর্মা নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন, তা হলে বাদল অধিবেশনেই তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনতে পারে কেন্দ্র। ‘নগদকাণ্ড’ ঘিরে বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের গড়ে দেওয়া তিন বিচারপতির অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট আগেই জমা পড়েছে শীর্ষ আদালতে। ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে অবসরগ্রহণের দিনকয়েক আগে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না।
বাদল অধিবেশনে যদি শেষ পর্যন্ত ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পেশ করা হয়, তবে সেখানে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য চাইছে কেন্দ্র। আগামী ২১ জুলাই থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হবে। তার আগে ইতিমধ্যে বিচারপতি বর্মার প্রসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে কেন্দ্র আলোচনা শুরু করেছে কেন্দ্র, এমনটাই জানিয়েছেন রিজিজু। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, বিষয়টির সঙ্গে বিচার বিভাগে দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ জড়িত। ফলে এটি নিয়ে প্রতিটি দলের পৃথক রাজনৈতিক অবস্থানের কোনও বিষয় নেই। তাই এটি নিয়ে সংসদকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও মনে করছেন রিজিজু। সংসদীয় মন্ত্রী জানান, তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। প্রতিটি দলের সঙ্গেই তিনি যোগাযোগ করবেন বলে জানান।