মাকে খুনের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পুত্রের। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
মাকে খুনের অভিযোগে ৩৮ বছর বয়সি পুত্রকে দোষী সাব্যস্ত করল উত্তরাখণ্ডের একটি আদালত। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, লাঠি দিয়ে মেরে মায়ের মাথার খুলি ফাটিয়ে দিয়েছেন যুবক। স্ত্রীর প্রসবে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা মায়ের কাছে তিনি চাইতে গিয়েছিলেন। না পেয়ে এই খুন। তিন বছর আগের সেই মামলায় সম্প্রতি রায় ঘোষণা করেছে আদালত। তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে যুবককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার ঘটনা। ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে চম্পা দেবী খুন হন নিজের বাড়িতেই। তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রবধূ ঊর্মিলার সাক্ষ্য এই মামলায় জ্যেষ্ঠ পুত্র কালাম রামকে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। কারণ সেই রাতে মা এবং ছেলে ছাড়া বাড়িতে কেবল ঊর্মিলাই ছিলেন। কী কী ঘটেছিল, আদালতে দাঁড়িয়ে তার বর্ণনা দিয়েছেন ঊর্মিলা।
সাক্ষী জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে চামোলিতে বরফ পড়ছিল। খুব ঠান্ডা ছিল। আচমকা বাড়িতে ঢোকেন তাঁর ভাসুর কালাম। মায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছ থেকে টাকা চান। জানান, তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হবে। সেই অস্ত্রোপচারের জন্য টাকা প্রয়োজন। কিন্তু টাকা দিতে রাজি হননি প্রৌঢ়া। জানিয়ে দেন, অস্ত্রোপচারের জন্য কোনও টাকা তিনি দিতে পারবেন না। এ নিয়ে মা এবং ছেলের মধ্যে দীর্ঘ ক্ষণ কথা কাটাকাটিও হয়েছিল, জানান ঊর্মিলা।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর মা এবং ছেলে একই ঘরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন। ঊর্মিলার বয়ান অনুযায়ী, মাঝরাতে পাশের ঘর থেকে চিৎকার শুনতে পান তিনি। আবার মা এবং ছেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। একসময় প্রচণ্ড জোরে শাশুড়ি চিৎকার করে উঠেছিলেন। ভয়ে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন ঊর্মিলা। পরের দিন সকালে দেখেন, শাশুড়ি মেঝেতে পড়ে আছেন। তাঁর মাথায় ক্ষত। রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা ঘর। চিৎকার করে এর পর লোক জড়ো করেন ঊর্মিলা। ভাসুরকে খুঁজে পাননি। স্বামীকে খবর দেন। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতেই দু’দিন পরে গ্রেফতার করা হয় কালামকে।
প্রৌঢ়ার দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছিল, ভারী কিছু দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তাতে খুলির সামনের দিকের হাড় ভেঙে গিয়েছে। ভেঙেছে মাথার পাশের হাড়ও। তাঁর ঘর থেকে রক্তমাখা একটি লাঠি উদ্ধার করে পুলিশ। তিন বছর ধরে চামোলির আদালতে এই মামলা চলেছে। অবশেষে অভিযুক্ত পুত্রকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকার জরিমানাও করা হয়েছে।