কালী মন্দিরের নীচে আলফার হাজার কোটির গুপ্তধন!

মাটির উপরে কালী মন্দির। মন্দিরের নীচে সুড়ঙ্গ আর গুপ্তকক্ষ। সেখানেই নাকি লুকনো রয়েছে ৩০০ কিলোগ্রাম সোনা ও ৩০০ কোটি টাকা! গুয়াহাটি লাগোয়া রানি চা বাগানে আলফার এমনই এক ধন-ভাণ্ডারের কথা সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা গোয়েন্দা।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৭
Share:

মাটির উপরে কালী মন্দির। মন্দিরের নীচে সুড়ঙ্গ আর গুপ্তকক্ষ। সেখানেই নাকি লুকনো রয়েছে ৩০০ কিলোগ্রাম সোনা ও ৩০০ কোটি টাকা! গুয়াহাটি লাগোয়া রানি চা বাগানে আলফার এমনই এক ধন-ভাণ্ডারের কথা সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা গোয়েন্দা।

Advertisement

২০১০ সালে রানি চা বাগানের মালিক মৃদুলকুমার ভট্টাচার্য এক বাগানকর্মীর ছেলেকে গুলি করে মারার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত বন্ধ ছিল ওই বাগান। এর পর ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনসুকিয়া জেলার কুনাপাথারে তাঁর চা বাগানেই ক্ষিপ্ত চা শ্রমিকরা তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা গোয়েন্দা মনোজকুমার কৌশল সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে দাবি করেছেন, তিনি তদন্তে জানতে পারেন অন্যান্য চা বাগানের মালিকদের কাছ থেকে আলফার হয়ে টাকা তুলতেন মৃদুলবাবু। এবং আলফার সাহায্যে মায়ানমার থেকে চোরাই সোনা আমদানি করে ব্যবসা করতেন। মৃদুলবাবু তাঁর চা বাগানে ওই ধনভাণ্ডার লুকনোর জন্য মাটিতে গর্ত ও সুড়ঙ্গ তৈরি করেছিলেন। সেখানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ও ৩০০ কিলোগ্রাম সোনা এবং দু’টি এ কে-৪৭ রাইফেল ছিল।
আর তা ঢাকতেই গর্তের উপরে একটি কালী মন্দির তৈরি করান তিনি। তিনি মারা যাওয়ার আগে সম্পদের খানিকটা অংশ সরিয়েও ফেলেছিলেন বলে কৌশলের দাবি।

ওই প্রাক্তন সেনা গোয়েন্দার দাবি, মৃদুলবাবু মারা যাওয়ার দেড় বছর পরে, ২০১৪ সালের ১৫ মে তিনি ওই গুপ্তধনের সন্ধান পান। ১ জুন তিনি সেখানে যান। কিন্তু তার আগেই অসম পুলিশের নেতৃত্বে ১৩ জন লোক বাকি সম্পদ সরিয়ে ফেলে। কৌশল ধনভাণ্ডারের খোঁজে ফের কালী মন্দিরের আশপাশে খনন
কাজ চালানো এবং পুরো ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যের পক্ষে বিভিন্ন ছবি ও তথ্যও তিনি আদালতে জমা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এ নিয়ে তিনি অসম সরকারের এক কর্তা, কেন্দ্রীয় সরকার, এমনকী প্রধানমন্ত্রীকেও রিপোর্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর গত ১৩ এপ্রিল এ নিয়ে একটি কমিটি গড়ে অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল মনিন্দর সিংহকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন। খোঁজখবর নিয়ে এবং ঘটনার সিবিআই তদন্ত করানোর ব্যাপারে অসম সরকারের মতামত নিয়ে ছ’সপ্তাহের মধ্যে আদালতকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ বলেন, “এমন গুপ্তধনের ভাণ্ডার থাকা বা পুলিশের টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে কোনও খবর নেই।” অসম পুলিশও গুপ্তধন ‘চুরির’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। এলাকাবাসী জানান, আলফার সঙ্গে মৃদুলবাবুর সম্পর্ক পরের দিকে খুব খারাপ হয়ে যায়। পেঙেরিতে আলফা তাঁকে মারার চেষ্টাও করে। ১৯৯৫ সালে চা-বাগানের ডাঙা জমিতে কালী মন্দিরটি তৈরি করান মৃদুলবাবু। প্রতিমার সোনার জিভ ও সোনার দুটি চোখ ২০১০ সালের মার্চে চুরি হয়ে যায়।

মৃদুলবাবুর ছেলে অত্রি ভট্টাচার্য বলেন, “এই ধরণের অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। এমন কোনও গুপ্তধন বাগানে ছিল না। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের অগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল বাগান। সেই সময়ের মধ্যে বাগানের সব কিছু লুঠ হয়ে, তছনছ হয়ে যায়। আমাদের ফের সব নতুন করে গড়তে হয়েছে। আমরা যে কোনও রকম তদন্তকেই স্বাগত জানাই।” আলোচনাপন্থী আলফার মুখপাত্র মৃণাল হাজরিকা বলেন, “সংগঠন এ ব্যাপারে কিছু জানত না। কেউ যদি আমাদের নাম নিয়ে এই সম্পদ জমা করে থাকে তা নিয়ে আলফার কিছু বলার নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন