দলিত নিগ্রহ নিয়ে হইচই, কিন্তু সংসদে বিতর্কের সময় নেই বিরোধীরাই

দুপুর আড়াইটেয় আলোচনা যখন শুরু হচ্ছে, শাসক শিবির তো প্রায় শূন্যই, এমনকী প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের মাত্র ৮ জন সাংসদ বসে রয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ২২:২৭
Share:

দুপুর আড়াইটেয় আলোচনা যখন শুরু হচ্ছে, শাসক শিবির তো প্রায় শূন্যই, এমনকী প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের মাত্র ৮ জন সাংসদ বসে রয়েছেন।

Advertisement

আলোচনা গড়িয়েছে, কিন্তু ৪৫ জন সাংসদের মধ্যে কংগ্রেসের হাজিরার সংখ্যা ২০ পেরোয়নি। সনিয়া গাঁধী অসুস্থ বলে হাসপাতালে। লোকসভায় নেই রাহুল গাঁধী, দলের নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে। শেষের দিকে সময় বাড়িয়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কিছুটা আবেগ, কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে বলবার চেষ্টা করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের জবাবের মাঝেই সভাকক্ষ ত্যাগ করে প্রতিবাদও নথিবদ্ধ করেছে। কিন্তু যে দলিত নিগ্রহ নিয়ে এক সপ্তাহ আগেও গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় চলছিল, যা নিয়ে আলোচনার দাবি করছিল খোদ বিরোধীরাই, আজ সেই আলোচনার সময়েই সেই ঝাঁঝটি আর চোখে পড়ল না।

কেন?

Advertisement

বিজেপির বক্তব্য, কারণ লোকসভায় বিতর্কের আগেই প্রধানমন্ত্রীর মাস্টারস্ট্রোক। গত শনি ও রবি, দু’দিন প্রধানমন্ত্রী গো-রক্ষকদের তুলোধনা করে যে ভাবে দলিতদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তার পর বিরোধীদের বিরোধিতার হাওয়া বেরিয়ে গিয়েছে। এই আলোচনার আগেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সব রাজ্যকে নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছেন, গো-রক্ষার নামে নিগ্রহ হলেই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ফলে কেন্দ্রের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে তা রাজ্যের উপরে ঠেলে দিয়েছে কেন্দ্র। এর পর বিরোধীদের আক্রমণের ঝাঁঝ যে অমিল হবে, সেটি অপ্রত্যাশিত নয়।

এই কৌশলে ভর করে আজ সরকারের উপর দলিত নিগ্রহ নিয়ে যে চাপ আসার আশঙ্কা ছিল, তা অনেকটাই মোকাবিলা করতে পেরেছে কেন্দ্র। দলিত নেত্রী মায়াবতীর কোনও সাংসদ নেই লোকসভায়, তাই তাঁদের দলের কেউ আক্রমণের সুযোগ পাননি। আর এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের যাবতীয় আক্রমণের অভিমুখটিও ঘুরিয়ে দিতে পেরেছেন রাজনাথ তাঁর জবাবি বক্তৃতায়। তাঁর মতে, মোদী সরকার আসার পর দলিত আক্রমণ বেড়েছে, এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কী লাভ? পরিসংখ্যান দেখিয়ে তিনি বলেন, হাওয়ায় অভিযোগ করলে তো হবে না!

প্রধানমন্ত্রী দেরি করে বলছেন, বললেও সংসদের ভিতরে বলছেন না- এই অভিযোগের জবাবও দেন রাজনাথ। তিনি বলেন, এর আগে কোন প্রধানমন্ত্রী সব বিষয়ে সংসদে এসে মুখ খুলেছেন? রাজনাথের এই বক্তব্যের সময় পিছন থেকে বিজেপি শিবিরের সাংসদরা বলতে থাকেন, ‘‘এর আগে তো ‘মৌনীবাবা’ (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ) ছিলেন। তিনি তো কিছুই বলতেন না।’’ রাজনাথের বক্তব্য, আজ বিজেপির উপরে হামলা করা হচ্ছে, কিন্তু কর্নাটক বা কংগ্রেস শাসিত অন্য রাজ্যে দলিত নিগ্রহের ঘটনা হলে তার দায় কে নেবে?

কিন্তু কেন আজ বিরোধীরা, বিশেষ করে কংগ্রেস শিবিরও দলিত-বিতর্ককে তেমন গুরুত্ব দিল না? যখন এই ইস্যুতে সরকারকে চেপে ধরার আরও সুযোগ ছিল? কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, আসলে ফি-বছর গোটা দেশে ৩০-৪০ হাজার দলিত নিগ্রহের ঘটনা ঘটে। সব রাজ্যেই কম-বেশি এমন ঘটনা হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দলিত নিগ্রহ নিয়ে বেশ কড়া কথা বলে ফেলেছেন। রাজ্যগুলিকেও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। এর পর যে কথা বাকি থাকে, সেটি হল কেন প্রধানমন্ত্রী এত দেরিতে বললেন? আর সঙ্ঘ-বিজেপির মানসিকতার জন্যই আরও আস্কারা পাচ্ছেন গো-রক্ষকরা। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, ‘‘গরুদের রক্ষা করা আমাদেরও ধর্ম। কিন্তু তাদের এত সাহস যোগাচ্ছে কে?’’

কিন্তু ওই পর্যন্তই। প্রতিবাদে কংগ্রেস সভাকক্ষ ত্যাগ করায় বরং ফাঁকা মাঠে গোল দিতে আরও সুবিধা হল সরকারপক্ষের। রাজনাথ দাবি করলেন, আরএসএস-ই গোটা দেশের সব থেকে বড় সংগঠন, যারা দলিত সেবা করে। দলিত চেতনার প্রসারের সময়ই আরএসএসের রাষ্ট্রবাদের ভাবনা বিকশিত হয় বলে তাঁর মত। ভারতের পৌরাণিক ইতিহাস ঘেঁটে তিনি বলেন, অতীতে কোনও ছুঁৎমার্গ ছিল না। কিন্তু স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও কেন এই আর্থ-সামাজিক সমস্যা থেকে যাচ্ছে, সেটির জন্য কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের পাশাপাশি সকলকেই ভেবে দেখতে হবে।

কাল সংসদের অধিবেশন শেষ। তার আগে দলিত বিতর্ক নিয়ে সংসদের কাঁটা পেরনোর পর এখন বিজেপির মূল চ্যালেঞ্জ উত্তরপ্রদেশের বৈতরণী পেরনো। ছোট-বড় সব নেতাই কবুল করছেন, সংসদ তো অনেক সময়ই রঙ্গমঞ্চ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ভোটের রুক্ষ মাটিতে ‘পদ্ম’ ফোটানো আদৌ সহজ কাজ নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন