বমডিলায় দলাই লামা।
চিন যেদিন ফের দলাই লামার অরুণাচল সফর বন্ধ করার হুমকি দিয়ে বলল, দলাই লামার সফর কখনওই 'অরাজনৈক' বা 'নিছক ধর্মীয়' হতে পারে না, সেই দিনই বমডিলায় দলাই লামা চিন-তিব্বত সম্পর্ক নিয়ে ফের মুখ খুললেন। বললেন, "তিব্বত ভৌগোলিক ভাবে চিনের অধীনস্থ হলেও রাজনৈতিক ভাবে সর্বদাই স্বাধীন ছিল।" এও জানালেন, তিনি ও তিব্বত সরকার এখন আর পূর্ণ স্বাধীনতা চাইছে না। তাঁরা মধ্যপন্থা ও সম্মানজনক স্বশাসনের শর্তে রাজি।
দলাই লামার বমডিলা-তাওয়াং সফর নিয়ে বারবার আপত্তি জানিয়েছে চিন। ভারতের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। তারা এ দিনও জানায়, দক্ষিণ তিব্বতের অঙ্গ তাওয়াংয়ে বিদ্রোহী নেতা দলাই লামার সফরে মদত দিয়ে ভারত অন্যায় করছে। তার ফল খারাপ হবে। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বরাবরই দাবি করেছে, দলাই লামার সফর রাজনৈতিক নয়, নিছক ধর্মীয়।
কিন্তু এ দিন বমডিলায় ধর্মসভার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দলাই লামা বলেন, "ভৌগোলিকভাবে তিব্বত চিনের মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু তিব্বত বরাবরই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ওরা (চিন) আমায় দৈত্য মনে করে। আপনারাই বলুন আমায় কি দৈত্যের মতো দেখতে?" অবশ্য বুদ্ধ মাঠের বাইরে দলাই লামা এ দিন ফের স্পষ্ট করে দেন, তিনি বা তিব্বত সরকার স্বাধীনতা চাইছে না। চিনকে 'মধ্যপন্থা'র বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, "সার্বভৌমত্ব গুরুত্বপূর্ণ বটে। কিন্তু আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ঐক্য। আমরা আর স্বাধীনতা চাই না। তিব্বত খুবই পিছিয়ে থাকা দেশ। বস্তুগত বিকাশের দিক থেকে আমরা চিনে থাকতে রাজি। কিন্তু আধ্যাত্মিক দিকে আমরা অনেক এগিয়ে, তাই চিনেরও আমাদের সম্মানজনক শর্তে স্বায়ত্বশাসন দেওয়া উচিত।"
চিন ব্রহ্মপুত্রের উৎসে একাধিক বাঁধ তৈরি করা নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে ভারত। দলাই লামা সে প্রসঙ্গে বলেন, "পরিবেশের উপরে চিনের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য বড় নদী তিব্বত থেকে বের হয়ে এশিয়াকে সমৃদ্ধ করছে। চিন জাগতিক লাভ ও উন্নয়নের জন্য নদীগুলিকে বাঁধ দিয়ে রুদ্ধ করলে সকলের ক্ষতি। বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাবও পড়বে তিব্বতে।"
চিন এ দিনও তাঁর সমালোচনা করেছে। তাঁকে কুচক্রী বলেছে সে দেশ। ওই প্রসঙ্গ তুলে তেনজিং গাৎসো বলেন, "গোটা চিন মোটেই আমার বিরুদ্ধে নয়। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধ চিনেই আছেন। সরকারেও অনেকেই নালন্দামতের বৌদ্ধ ধর্মের উপাসক। তাঁরা আমাকে সমর্থন করেন। কিন্তু কয়েকজন সংকীর্ণমনা রাজনীতিবিদ আমার বিরুদ্ধে ওইসব কথা বলছেন ও সমস্যার সমাধানে বাধা দিচ্ছেন।"
চিনের বক্তব্য, দলাই লামাকে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ভারত। ওই অভিযোগ উড়িয়ে দেন দলাই লামা। তাঁর কথায়, "ভারত ও তিব্বতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্র অনেক প্রাচীন ও নিবিড়। ভারত আমায় যা সাহায্য করেছে, যে ভাবে আমায় ও আমার অনুগামীদের ৫৮ বছর ধরে আশ্রয় দিয়েছে- তা ভোলার নয়।"
এ দিকে, অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু এ দিন বলেন, দলাই লামার সফর নিয়ে চিনের আপত্তি করার অধিকার নেই। কারণ ওরা আমাদের প্রতিবেশী দেশও নয়। স্পষ্ট করে বলতে চাই, অরুণাচলের সীমান্ত তিব্বতের সঙ্গে, চিনের সঙ্গে নয়। তাই আমরা কাকে আমন্ত্রণ করব, না করব তা নিয়ে চিনের মতামত অপ্রয়োজনীয়।