প্রতীকী চিত্র।
দামে কিছু সস্তা পড়ে বলে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে হরিয়ানার মেওয়াত থেকে রাজস্থানের জয়পুরে এসেছিলেন পহেলু খান ও তাঁর সঙ্গীরা। রামগড়ের হাটোয়ারা এলাকার সাপ্তাহিক হাট থেকে গরু কিনে ফিরছিলেন। সপ্তাহখানেক আগে অলওয়রে গোরক্ষকদের হাতে পহেলু খুন হওয়ায় এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে হাটোয়ারার ওই গরুর হাটে হাটুরের সংখ্যা অর্ধেকেরও কম হয়ে গিয়েছে এক ধাক্কায়। এই অবস্থায় কী ভাবে মানুষের মনে ভরসা ফেরানো যায়, সেই চেষ্টার বদলে জয়পুর পুরসভা এখন হাটটাই বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে।
অথচ ফি শনিবার এই হাটে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার কেনাবেচা হয়ে এসেছে এত দিন। মাংসের জন্য শুধু নয়, দুধ ও চাষবাসের জন্যেও গরু-মোষ কিনে নিয়ে যান আশপাশ বা দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। গোল বেধেছে এখানেই। জয়পুর পুরসভার মেয়র অশোক লাহোটির বক্তব্য, এলাকার লোক হলে খোঁজখবর রাখা যায়। কারা ভিন্ রাজ্য থেকে আসছে, কারা মাংস ব্যবসায়ী— এ সব জানা মুশকিল। মেয়রের কথায়, ‘‘হাটোওয়ারা থেকে গরু কেনার কিছু রসিদ মিলেছে অলওয়রে। এটা স্পষ্ট, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাত ও আরও দূরের রাজ্য থেকেও লোক আসেন এই হাটে।’’ মেয়র এ-ও স্বীকার করছেন, সব কেনাবেচা ও পরিবহণ আইন মেনে হচ্ছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় পুরসভার পক্ষে।
গরু-মোষ নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরসভা চালান দেয় বটে, তবে রাজ্যের বাইরে নিতে হলে লাগে জেলাশাসকের দফতরের অনুমতি। কিন্তু গোরক্ষার নামে যে ভাবে আতঙ্ক ও হিংসা ছড়ানো হচ্ছে, ঘটছে খুনোখুনি, তাতে দায় এড়াতে হাটটাকেই বলি দেওয়ার সহজ রাস্তার কথা ভাবছেন জয়পুরের মেয়র। তাঁর কথায়, ‘‘হাটটা বন্ধ করে দেওয়া হবে কিনা, আমরা সে ব্যাপারে খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেব।’’ তবে তার আগে ডেপুটি কমিশনারকে একটি সবিস্তার রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছেন তিনি।
বিষয়টি এখন আর রামগড়ের ওই একটি হাটেই সীমাবদ্ধ নেই। গোটা দেশেই, বিশেষ করে বিজেপি-শাসিত রাজ্যে গবাদি পশুর ব্যবসা নিয়ে ডামাডোল তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ সমাজকর্মীদের। সমাজকর্মী অশোক চৌধুরী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গবাদি পশু কেনাবেচার বাজারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন গরিব কৃষক-পশুপালকেরা। গো-রক্ষা আইনে তবে বলা হোক, অপ্রয়োজনীয় গরু-মোষ রাজ্য সরকার বাজারদরে কিনে নেবে।’’