প্রতিবাদে একজোট। বুধবার চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে। ছবি: এএফপি।
জাল্লিকাট্টুর (ষাঁড়ের দৌড়) উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবিতে যুব সমাজের প্রতিবাদে উত্তাল তামিলনাড়ু। রাজ্যের বিভিন্ন অংশ স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে ফুঁসছে চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকত থেকে মাদুরাইয়ের আলানগনল্লুর। আটক করা হয়েছে দু’শোরও বেশি যুবককে। এই পরিস্থিতিতে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও পনীরসেলভম জানিয়েছেন, জাল্লিকাট্টু নিয়ে জটিলতা দূর করতে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন।
চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে ক্লাস বয়কট করে প্রতিবাদে যোগ দেয় বহু পড়ুয়া। আগামিকাল থেকে ৩১টি কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে অভিযোগ ওঠে, মেরিনা রোডে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালীন প্রশাসন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। কে বালু নামে এক আইনজীবী বিষয়টি মাদ্রাজ হাইকোর্টে জানান। তাঁর আরও অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের পানীয় জল দিতে অস্বীকার করা হয়। বুধবার অবশ্য মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এস কে কওল এবং বিচারপতি এম সুন্দরের বেঞ্চ জানিয়েছে, এই অবস্থায় বিষয়টিতে আদালত হস্তক্ষেপ করতে চায় না। বেঞ্চের মতে, ‘‘প্রথমত সুপ্রিম কোর্ট আগে থেকেই জাল্লিকাট্টু সম্পর্কে জানে। ফলে তামিলনাড়ু সরকার বা হাইকোর্ট, কেউই এ নিয়ে কিছু করতে পারে না। তা ছাড়া মেরিনা রোড বিক্ষোভ দেখানোর জায়গা নয়।’’
কোর্টের বক্তব্য জানার পরেও মেরিনা সৈকত থেকে ভিড় সরেনি। মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রতিবাদকারীরা জমায়েত করেন। বুধবার সেখানে ছিলেন অন্তত হাজার খানেক পড়ুয়া। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়, প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে অর্ডিন্যান্স আনা হবে। তার পর বেলা গড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভম জানিয়ে দেন, এডিএমকে-র ৫১ জন সাংসদকে নিয়ে তিনি আগামিকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। শতাব্দীপ্রাচীন এই খেলা যাতে এ বছর আয়োজন করা যায়, তার জন্য অর্ডিন্যান্স আনার অনুরোধ করা হবে। পড়ুয়াদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিক্ষোভের পথ থেকে সরে আসুন।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল শুধু আলানগনল্লুর গ্রাম থেকেই আটক করা হয় দু’শোর বেশি প্রতিবাদীকে। এর জেরে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে আটক যুবকদের মুক্তির দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। আলানগনল্লুরে সুপ্রিম কোর্টের নিষেধ অগ্রাহ্য করেই জাল্লিকাট্টুর আয়োজন করা হচ্ছে— এমন একটা খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে দিন কয়েক আগে। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য যুবক ভিড় করেন ওই গ্রামে। কিছু দুষ্কৃতী রাস্তায় ষাঁড় ছেড়ে দেয়। যুবকরাও তাদের সঙ্গে দৌড়তে শুরু করে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই সময় লাঠিচার্জ করে যুবকদের সরাতে যায় পুলিশ। তখনই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
মাদুরাইয়ের ডিএসপি বিজয়েন্দ্র এস বিদারি প্রতিবাদী যুবকদের অনুরোধ করেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখান। যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের দাবি ছিল, মঙ্গলবারই সন্ধে ছ’টার আগেই অর্ডিন্যান্স এনে জাল্লিকাট্টু করতে দিতে হবে।