চোখের জলে বিদায় কাশ্মীরের দবঙ্গকে

গত কাল অনন্তনাগের আচ্ছাবলে লস্কর জঙ্গিদের হানায় নিহত ফিরোজকে ‘দবঙ্গ’ বলে ডাকতেন সহকর্মীরা। অফিসাররা জানিয়েছেন, অভিযানে সব সময়েই একেবারে সামনের সারিতে থাকা ফিরোজের উপরে নির্ভর করা যেত।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০৩:৩২
Share:

ফিরোজ আহমেদ দার

বছর চারেক আগের কথা। ফেসবুকে নিজের মৃত্যুর পরের কথা ভেবে কয়েকটি লাইন লিখেছিলেন কাশ্মীরের তরুণ পুলিশ অফিসার ফিরোজ আহমেদ দার। আজ যখন চোখের জলে তাঁকে বিদায় জানাল পুলওয়ামার ডোগরিপোরা, তখন সেই লাইনগুলিই ফিরে আসছিল বহু সহকর্মী-পরিজনের মনে।

Advertisement

গত কাল অনন্তনাগের আচ্ছাবলে লস্কর জঙ্গিদের হানায় নিহত ফিরোজকে ‘দবঙ্গ’ বলে ডাকতেন সহকর্মীরা। অফিসাররা জানিয়েছেন, অভিযানে সব সময়েই একেবারে সামনের সারিতে থাকা ফিরোজের উপরে নির্ভর করা যেত। এক বার জঙ্গিদের গোপন আস্তানার খবর পেয়ে তাড়াতাড়িতে চটি পরেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

কিন্তু অন্য ধরনের চিন্তাভাবনাও যে করতেন তার পরিচয় মিলছে বছর চারেক আগের ওই ফেসবুক পোস্টে। সেখানে বছর বত্রিশের ফিরোজ লিখেছিলেন, ‘‘কখনও ভেবেছেন কবরে প্রথম রাত্রিটা কেমন হবে? ভাবুন আপনাকে কবরে শোয়ানোর আগে স্নান করানো হচ্ছে। যাঁরা আপনাকে সমাধিস্থলে নিয়ে যাবেন, আপনার আত্মীয়-পরিজন, তাঁদের কথাও ভাবুন।’’ হয়তো মৃত্যুর ছায়ায় কাজ করতে করতেই তাঁর মন ছুঁয়ে গিয়েছিল মৃত্যুর ভাবনা।

Advertisement

ভূস্বর্গ স্বাভাবিক হোক, এটাও চাইতেন মনেপ্রাণে। তাই এক বার ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘ঈশ্বর, কবে যে কাশ্মীর স্বাভাবিক হবে?’’

আরও পড়ুন:‘গান স্যালুট’ লস্কর নেতার শেষকৃত্যে

ডোগরিপোরায় ফিরোজের বাড়িতে সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফিরোজের বাবা-মা আর স্ত্রী মুবিনা আখতারের কান্নার মধ্যেই অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল বছর ছয়েকের মেয়ে আদা আর বছর দুয়েকের সিমরন। বাবা যে কেন আর আসবেন না, বাড়িতে এত ভিড়ই বা কেন, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না ফিরোজের ছোট্ট দুই মেয়ে। সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছিলেন ফিরোজ। আর গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, জঙ্গি দমনের দায়িত্বে থাকা দুর্ধর্ষ পুলিশ অফিসার বাড়িতে ছিলেন অন্য মানুষ। গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন। বন্ধুদের বলতেন গরিব ছেলেদের স্কুলে ভর্তি করাতে।

জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি এস পি বৈদ্যের কথায়, ‘‘সকলের ভালবাসা পাওয়ার মতো চরিত্র ছিলেন ফিরোজ।’’ বৈদ্যের দাবি, বশির লস্করির নেতৃত্বাধীন লস্করের দলই ফিরোজ-সহ ছয় পুলিশকর্মীর মৃত্যুর জন্য দায়ী।

মনের কথা জানাতে ‘এলওসি কার্গিল’ ছবির গানের কয়েকটি শব্দ ধার করেছেন ফিরোজের সহকর্মী সুনীল শর্মা। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বাস ইতনা ইয়াদ রহে, এক সাথি অউর ভি থা….....।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement