বলছে এইমস রিপোর্ট

সেরেই উঠছিলেন জয়ললিতা

টানা ৭৪ দিন তাঁকে কেউ চোখে দেখেনি। কোনও ছবিও প্রকাশ্যে আসেনি। মাঝে তাঁর একটি বিবৃতি দলের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হলেও তাঁর কণ্ঠ কেউ শোনেনি। হাসপাতালের বাইরে যখন এলেন, তখন নিথর দেহ।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০২
Share:

টানা ৭৪ দিন তাঁকে কেউ চোখে দেখেনি। কোনও ছবিও প্রকাশ্যে আসেনি। মাঝে তাঁর একটি বিবৃতি দলের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হলেও তাঁর কণ্ঠ কেউ শোনেনি। হাসপাতালের বাইরে যখন এলেন, তখন নিথর দেহ।

Advertisement

মৃত্যুর পরেও এক সপ্তাহের বেশি কেটে গিয়েছে, কিন্তু হাসপাতালে এই ক’দিন জয়ললিতা কেমন ছিলেন, তা আজও কৌতূহলের বিষয়। বিরোধী দল ডিএমকে-র নেতা এম কে স্ট্যালিন বৃহস্পতিবারও দাবি জানিয়েছেন— জয়ার কী চিকিৎসা হয়েছে, তার সবিস্তার রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। রাজনৈতিক দলগুলির প্রশ্ন, যাঁকে আড়াই মাস চোখেই দেখা গেল না, তিনি কী করে মুখ্যমন্ত্রীর পদে কাউকে বেছে দিয়ে যেতে পারেন?

এই জল্পনা আরও জোর পেয়েছে, কারণ হাসপাতালে যাঁরাই জয়ললিতাকে দেখতে গিয়েছিলেন— তা সে নরেন্দ্র মোদীর দূত অমিত শাহ বা অরুণ জেটলি হোন, বা বিরোধী নেতা স্ট্যালিন, কেউই জয়াকে দেখতে পাননি। অসুস্থ নেত্রীকে নিরন্তর আগলে রেখেছিলেন সহচরী শশিকলা। তাঁর কাছে খোঁজখবর নিয়েই ফিরতে হয় সকলকে।

Advertisement

জয়ললিতার চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তো ছিলেনই, লন্ডন থেকে প্রফেসর রিচার্ড বেলকেও উড়িয়ে আনা হয়েছিল। একই সঙ্গে দিল্লি থেকে এইমসের একটি বিশেষজ্ঞ দলও নিরন্তর তাঁর চিকিৎসায় নজরদারি করেছে। এইমসের এই চিকিৎসকেরা ফিরে এসে জয়ললিতার চিকিৎসা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে একটি রিপোর্ট দেন। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাইরে জয়ললিতার স্বাস্থ্য নিয়ে যতই গুজব থাকুক, আসলে তিনি সত্যিই সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। হঠাৎ হার্ট-অ্যাটাক না হলে আর ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে বাড়িও ফিরে যেতেন।

মন্ত্রকের এক শীর্ষ সূত্রের মতে, রিপোর্টে বলা হয়েছে— যখন থেকে অ্যাপোলোর চিকিৎসকেরা বলতে শুরু করেন, জয়ললিতা সুস্থ হয়ে উঠছেন, তখন তিনি উঠে বসতে পারছিলেন। তাঁর ওজন ১১০ কেজি থেকে ১৯ কেজি কমে দাঁড়িয়েছিল ৯২ কেজিতে। কোনও কৃত্রিম যন্ত্র বা ক্যাথিটারও লাগাতে হয়নি। নিজে খাবারও খাচ্ছিলেন। তবে কথা বলতে সমস্যা হওয়ায় চিকিৎসকেরা তাঁকে স্বর-যন্ত্রের মাধ্যমে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু জয়ললিতা তা ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, নিজেই ধীরে ধীরে কথা বলা রপ্ত করবেন। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের সঙ্গেও আকারে ইঙ্গিতে কথা বলতেন, এমনকী হাসি-ঠাট্টাও করতেন আম্মা।

তবে দীর্ঘদিন আইসিইউ-র বেডে থাকার কারণে জয়ার দু’টি পা সাড় হারিয়েছিল। তার জন্য ফিজিওথেরাপি চলছিল। সে’টি আর কয়েক সপ্তাহ চলার পরে জয়ললিতা হুইলচেয়ারে বাড়ি ফিরে যেতে পারতেন বলে এইমসের চিকিৎসকেরা কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগেই জয়ললিতা যে
বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন, তাতে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের দীর্ঘ প্রার্থনার ফলে আমার পুনর্জন্ম হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে শীঘ্রই কাজে ফিরব।’’

কিন্তু হঠাৎ হৃদ্‌যন্ত্র স্তব্ধ হয়ে য়াওয়ায় আর ফিরে আসা হয়নি তামিলনাড়ুর আম্মার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন