নাগরিকত্ব বিতর্ক এড়ালেন ডোনার মন্ত্রী

বাংলাদেশের মানুষ আবার বিদেশি কী! আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারে এসে এমনই মন্তব্য করলেন উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন (ডোনার) মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

সম্মেলনের উদ্বোধনে জিতেন্দ্র সিংহ। ছবি:সানি গুপ্ত

বাংলাদেশের মানুষ আবার বিদেশি কী! আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারে এসে এমনই মন্তব্য করলেন উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন (ডোনার) মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। একই মঞ্চে বসা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরীকেও তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন— ‘‘একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দরুন আমাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত গড়ে উঠেছে।’’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজি নজরুল ইসলাম যে দুই দেশেই সমান বন্দিত, তারও উল্লেখ করেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্রবাবু।

Advertisement

এমন সময়েই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দুই দেশের মানুষের হৃদ্যতার কথা বললেন, যখন বাংলাদেশি বিতর্কে ক্রমশ উত্তাল হচ্ছে অসম। রাজ্যের বাঙালিদের বিদেশি সন্দেহে প্রতি দিন বাক্যবাণ ছাড়ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। বাদ নেই অসমের বিজেপি নেতারাও। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইয়ের যেমন দাবি, ‘অসমের হিন্দু বাঙালিরা অসমিয়া ভাষা-সংস্কৃতি গ্রহণ করলেই সমস্ত বিবাদ মিটে যায়!’ বাঙালি হয়েও হোজাইয়ের বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব জানান, তিনি অসমিয়া পরিচিতিতেই গর্ববোধ করেন।

বরাকের মানুষ আজ বিজেপি নেতাদের এ সব কথাবার্তার প্রতিবাদে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন, মিছিলে হাঁটেন।

Advertisement

ডোনার মন্ত্রী অবশ্য এই বিতর্কে ঢুকতে চাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিষয় ছিল, উত্তর-পূর্ব ভারত সীমান্ত রাষ্ট্রগুলির আর্থিক নির্ভরতা। বিষয়বস্তুর ভিতরে থেকেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিদেশ নীতি, আর্থিক ভাবনা, অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি-র মতো বিষয়গুলিকে ছুঁয়ে যান। তাঁর বক্তৃতার আগে অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী জানান, ৫ ঘণ্টায় তিনি বাংলাদেশের শ্রীহট্ট থেকে ভারতের শিলচরে চলে এসেছেন। সে কথার সূত্র ধরে জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘কিছুদিন আগেও আমরা একই দেশে ছিলাম। ১৯৪৭ সালের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কথা বাদ দিলে ৫ ঘণ্টা ধরে তাই উনি (অধ্যাপক চৌধুরী) একই দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছিলেন।’’ মোদী সরকার এখনও অখণ্ড ভাবনায় বিশ্বাসী, সেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলি ভারতীয় উপমহাদেশ। আমাদের এই ভাবনায় কামালবাবু সীমান্ত পেরিয়ে এলেও একই উপমহাদেশে রয়েছেন।’’

তাঁর কথার নির্যাসটুকু হল, উত্তর-পূর্ব ভারতকে নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। বেঙ্গালুরু বা এমন কী, কলকাতার দিকে তাকিয়ে থাকলেও হবে না, এই অঞ্চলকে তাকাতে হবে সীমান্তঘেঁষা রাষ্ট্রগুলির দিকে। মোদী সরকার সে জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্টতর করা হয়েছে। অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গেও বন্ধুত্ব রয়েছে। ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ওই সব রাষ্ট্রের বাজার ধরার কথা ভাবতে হবে। এমন সামগ্রী এখানে তৈরি করতে হবে, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে যার চাহিদা রয়েছে।

কী ভাবে তা সম্ভব, নিজের সরকারকে পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়ে তারও উপায় বাতলে দেন। জিতেন্দ্রবাবু জানান, এই অঞ্চলে সম্পদ সৃষ্টির সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযাগ সমস্যা। তাঁদের সরকার ক্ষমতায় এসেই তার সমাধানে সচেষ্ট হয়েছে। শিলচর পর্যন্ত ব্রডগেজ এসে গিয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যে রেল যোগাযোগ শুরু হবে। উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজধানীকে একটিই নেটওয়ার্কে আনার কাজ করছে রেলবিভাগ। বিমান যোগাযোগেও চেষ্টার খামতি নেই দাবি তাঁর। এই ক্ষেত্রেও তিনি মনে করেন, বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের চেয়ে বেশি জরুরি উত্তর-পূর্বের এক শহরের সঙ্গে অন্য শহরের দ্রুত সম্পর্ক স্থাপন। তাই ছোট ছোট বিমানবন্দর তৈরি করে কপ্টার-সেবা চালুর পরিকল্পনার কথা শোনান ডোনারমন্ত্রী। শিলচরের সঙ্গে হেলিকপ্টারে কোন কোন শহরকে জোড়া যায়, তাও তিনি ভাবছেন বলে জানান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পরামর্শ, মোদী সরকারের অ্যাক্ট ইস্ট-কে কার্যকর করতে এখানকার ছেলেমেয়েদের বেশি করে স্টার্ট আপ প্রকল্পে মনোযোগ দিতে হবে। এই প্রকল্পে যে শুধু উত্তর-পূর্বের জন্য ভেঞ্চার ফান্ড বলে একটি তহবিল তাঁর মন্ত্রক জুগিয়ে থাকে, সে কথাও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। বলেন, এই সুবিধা নিয়ে এখানকার উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো গেলে ব্রেন-ড্রেন আর হবে না। বরং কাজের খুঁজে অন্য অঞ্চলের মানুষ এখানে আসবেন। তাঁর কথায়, ‘‘এত প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এতগুলি রাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ভারতের খুব কম অঞ্চলেরই রয়েছে।’’

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নর্থ-ইস্ট স্টাডিজ বলে কোনও সেন্টার হলে তাঁর মন্ত্রক সব ধরনের সাহায্য করবে বলে আশ্বাস দেন জিতেন্দ্র সিংহ। পাশাপাশি একটি বড়সড় অডিটোরিয়াম তৈরির জন্য উপাচার্যের দাবি মেনে নেন। উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন। স্বাগত ভাষণ দেন ডিন নিরঞ্জন রায়। সাম হাউস্টন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এইচ কে নাথও বক্তব্য রাখেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন