আসাম বিশ্ববিদ্যালয়

জাল ছড়াচ্ছে জামাতুল,অভিযোগ ছাত্রনেতার

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাঁটি গড়েছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (সংক্ষেপে, জেএমবি)— এমনই অভিযোগ তুললেন শিলচরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের নেতা প্রদীপ দত্তরায়। সরাসরি তিনি আঙুল তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক সহকারী অধ্যাপকের দিকে। এ নিয়ে খোঁজখবর করার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ দাশগুপ্ত। বাংলা বিভাগের ওই সহকারী অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাঁর মোবাইল ‘সুইচড অব’ ছিল।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪১
Share:

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাঁটি গড়েছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (সংক্ষেপে, জেএমবি)— এমনই অভিযোগ তুললেন শিলচরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের নেতা প্রদীপ দত্তরায়। সরাসরি তিনি আঙুল তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক সহকারী অধ্যাপকের দিকে। এ নিয়ে খোঁজখবর করার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ দাশগুপ্ত। বাংলা বিভাগের ওই সহকারী অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাঁর মোবাইল ‘সুইচড অব’ ছিল।

Advertisement

প্রদীপবাবুর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি মতাদর্শ ছড়ানোর জন্য ৫ জন শিক্ষককে দলে টেনেছে জামাতুল। ইতিমধ্যে ওই দলের সদস্যপদ নিয়েছে ৯ জন পড়ুয়াও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ছাত্রাবাসে গোপনে সভাও করেছে জামাতুল।

প্রদীপবাবুর অভিযোগ সহজে উড়িয়ে দিতে পারছেন না বরাকের মানুষ। কারণ, ২০১৩ সালেই তিনিই প্রথম বরাকে মাওবাদী সক্রিয়তার কথা জানিয়েছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন প্রদীপবাবু। ওই বক্তব্যের জন্য তখন দলের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল। এমনকী কয়েক জন দলীয় নেতা প্রদীপবাবুকেই পুলিশি জেরা করার দাবি তোলেন। কিন্তু তার কয়েক দিন পরই শিলচরে ধরা পড়েন প্রথম সারির মাওবাদী নেতা অনুকূল নস্কর ওরফে পরেশদা। গত মাসে রূপাছড়ায় অভিযান চালিয়ে তিন মাও জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

প্রদীপবাবু আজ বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে জেএমবি-র কাজকর্মে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলা বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপক। গত ১৩ জানুয়ারি তিনি ছাত্রাবাসে বৈঠকেরও ব্যবস্থা করেছিলেন।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে আরব দেশগুলিতে সফর করেন ওই অধ্যাপক। বাংলাদেশ ঘেঁষা বরাক উপত্যকায় অশান্তি ছড়ানোর ছক তৈরি হয় সে সব দেশেই।’’

অভিযোগের পক্ষে তাঁর কাছে প্রচুর তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলেও প্রদীপবাবুর দাবি। তিনি জানান, এ বিষয়ে দ্রুত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে চিঠি পাঠাবেন। যোগাযোগ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গেও। প্রয়োজনে সমস্ত নথি নিয়ে দিল্লি যেতেও প্রস্তুত রয়েছেন। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, এ নিয়ে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি পাঠালেও, কোনও সাড়া মেলেনি।

উপাচার্য সোমনাথবাবু অবশ্য জানান, প্রদীপবাবুর কোনও চিঠি তিনি এখনও পাননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ সব কথা প্রথম শুনলাম। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে শিলচরের বাইরে রয়েছি। ফিরেই খোঁজখবর নেব।’’ উপাচার্য জানিয়েছেন, প্রদীপবাবুর কাছে থাকা প্রমাণ তিনি নিজে দেখতে আগ্রহী।

বরাক উপত্যকায় জেএমবি সংগঠন তৈরির চেষ্টার খবর নেই পুলিশ কর্তাদের কাছে। ডিআইজি বিনোদ কুমার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এই অভিযোগ কেউ করেননি। এ রকম কোনও গোয়েন্দা রিপোর্টও নেই।’’ একই বক্তব্য রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা অফিসারদেরও। কিন্তু প্রদীপবাবুর দাবি, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি সংগঠন বিস্তারের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হলে পুলিশের হাতে সমস্ত প্রমাণ তুলে দেব।’’

শিলচরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির দাবিতে ‘অল কাছাড় স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ (আকসা) গঠন করেছিলেন প্রদীপবাবু। তিনিই ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কাছাড় জেলা ভাগ হওয়ার পর সংগঠনটির নাম হয় ‘অল কাছাড়-করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’। পরে কংগ্রেসে যোগ দেন প্রদীপবাবু। গত ফেব্রুয়ারিতে সেখান থেকেও ইস্তফা দেন। এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে প্রদীপবাবুর সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে সামিল প্রমোদ শ্রীবাস্তব, সঞ্জু দে, ঝলক দেবরা। তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, জামাতুল গোটা বরাক উপত্যকায় অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এই কাজে জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। এ নিয়ে সিবিআই তদন্তেরও দাবি উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন