এই যাঁড়ের লড়াই ঘিরেই শুরু বিতর্ক।
শুধুমাত্র ঐতিহ্য বজায় রাখতেই কি অমানবিক প্রথা মেনে চলতে হবে? প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। যার জেরে প্রশ্নের মুখে তামিলনাড়ুর পাঁচ হাজার বছরের পুরনো যাঁড়ের লড়াই জল্লিকাট্টু। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, আগামী অগস্টে চূড়ান্ত শুনানিতেই স্থির হবে জল্লিকাট্টুর ভবিষ্যৎ।
গ্রামের মন্দিরের ষাঁড়ের লড়াইয়ে নিছক মজা নয়, লুকিয়ে রয়েছে এর হিংস্রতার দিকটিও। পোঙ্গলের সময় এই খেলায় মারা যায় বহু ষাঁড়। গুরুতর আহত হন লড়াই দেখতে জমায়েত দর্শকরাও। কিন্তু, তা সত্ত্বেও এই প্রাচীন প্রথাকে বিলুপ্ত করার কথা ভাবতে পারেন না অনেকেই। এটি বন্ধের জন্য আদালতের দ্বারস্থ পশুপ্রেমীরা। পিপলস ফর দ্য এথিকাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস (পেটা)-এর দেশীয় শাখা এ নিয়ে বরাবরই সরব। নৃশংস প্রথা বন্ধের জন্য আদালতে আবেদন করে তারা। ২০১৪-তে সর্বোচ্চ আদালতে রায় তাদের পক্ষে যায়। জল্লিকাট্টু নিষিদ্ধ করে আদালত। এ নিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে তামিলনাড়ু এবং কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশেষ আইন করে জল্লিকাট্টুর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে কেন্দ্র সরকার। যদিও এই সিদ্ধান্তের পিছনে আদতে তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের সমীকরণের দায় ছিল বলেই মত অনেকের।
জল্লিকাট্টুর আক্ষরিক অর্থ ষাঁড়কে পোষ মানানো। পশুপ্রেমীদের অভিযোগ, পোষ মানানোর এই খেলায় অনেক সময়ই ষাঁড়কে মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে তার চোখে লঙ্কাগুঁড়ো ছিটিয়ে দেওয়া হয়। কখনও বা কাচ দিয়ে ঘষে ষাঁড়ের শিং তীক্ষ্ণ করা হয়। যার গুঁতোয় গুরুতর জখম হন অনেক দর্শক। এমনকী, এতে বহু দর্শকের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু, এ সমস্ত বিষয় এড়িয়ে নির্বাচনের আগে রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোই এর সপক্ষে প্রচার চালায়। পেটা-র আবেদনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে তামিলনাড়ুর তৎকালীন কংগ্রেস সরকার জানায়, জল্লিকাট্টু যথেষ্ট সুরক্ষিত খেলা। আর ঐতিহ্যকে চ্যালেজ্ঞ করার কোনও অধিকারই নেই ওই পশুপ্রেমীদের।
এ দিন অবশ্য আদালতের প্রশ্ন তুলেছে, ১৮৯৯ সালে ১২ বছরের কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে আইনসিদ্ধ ছিল। শুধুমাত্র ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে এখনও কি তা চালিয়ে যেতে দেওয়া উচিত? সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী এ ধরনের খেলা চলতে দেওয়া যায় কি না তা দেখা হবে। অতএব, এখন অপেক্ষা আগামী অগস্টের!
আরও পড়ুন