কড়া ধাত চেনালেন প্রধান বিচারপতি

এক আইনজীবী অভিনন্দন জানাতে গিয়ে ধমক খেলেন, ‘‘এখন কাজের সময়!’’ উকিলের গাউন পরে ব্যক্তিগত মামলায় হাজির হওয়ায় মামলা খারিজের হুঁশিয়ারি শুনতে হল বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়কে। 

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৪৫
Share:

রঞ্জন গগৈ

দুই ছেলের মধ্যে কে ফৌজি হবে, টস করেছিলেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশবচন্দ্র গগৈ। টস জিতেছিলেন বড় ছেলে অঞ্জন। এয়ারমার্শাল হিসেবে অঞ্জন বায়ুসেনা থেকে অবসর নিয়েছেন। কেশবচন্দ্র এক বন্ধুকে বলেছিলেন, ছোট ছেলে রাজনীতিতে না এলেও প্রধান বিচারপতি হবে। আজ রঞ্জন গগৈ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন কড়া হাতে।

Advertisement

এজলাসের শুরুতে আইনজীবীরা রোজ ভিড় করেন দ্রুত শুনানির আর্জি নিয়ে। মিনিট কুড়ি তাতেই যায়। প্রধান বিচারপতি গগৈ সেই ব্যবস্থাটাই তুলে দিলেন। তাঁর নির্দেশ—কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে, কাউকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হবে বা কারও সম্পত্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, এমন না হলে দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো যাবে না। এক আইনজীবী অভিনন্দন জানাতে গিয়ে ধমক খেলেন, ‘‘এখন কাজের সময়!’’ উকিলের গাউন পরে ব্যক্তিগত মামলায় হাজির হওয়ায় মামলা খারিজের হুঁশিয়ারি শুনতে হল বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়কে।

বিকেলে বার অ্যাসোসিয়েশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সাধারণত দু’ঘণ্টা সময় লাগে। প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘এক ঘণ্টায় গোটানো যায়!’’ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিংহই টসের গল্পটি শুনিয়ে কড়া মেজাজের প্রধান বিচারপতিকে মাঝে মাঝে নরম হওয়ার অনুরোধ জানালেন। গগৈ বললেন, ‘‘আমি এমনই। নিজেকে বদলাতে পারব না।’’ অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালের বক্তব্য ছিল, বিচারপতিদের অবসরের বয়স, বেতন বাড়ানো উচিত। প্রধান বিচারপতির জবাব, ‘‘বেতনই বাড়ুক আর অবসরের বয়স, বিচারপতিদের নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।’’ এখানেই আসলে নতুন প্রধান বিচারপতির চ্যালেঞ্জ, মনে করছেন আইনজীবী তথা রাজনীতিকরা। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা যেমন বলেন, ‘‘গোটা দেশ ওঁর দিকে তাকিয়ে। বিচারবিভাগের সম্মানে আঘাত এসেছে। সবাই চায়, উনি হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনুন।’’

Advertisement

সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে বিচারপতি গগৈ ও অন্যান্য প্রবীণ বিচারপতিরাই বিচারবিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন। বাছাই করা বিচারপতিদের বেঞ্চে স্পর্শকাতর মামলা পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। প্রধান বিচারপতি নতুন রস্টার করে বলেছেন, জনস্বার্থ মামলা তিনি নিজেই শুনবেন। কিছু জনস্বার্থ মামলা প্রবীণ বিচারপতি মদন বি লোকুরের বেঞ্চেও পাঠানো হবে।

আইনজীবীদের মত, এ বার বাবরি মামলার শুনানি কোন দিকে এগোচ্ছে, সে দিকে নজর থাকবে। ভীমা-কোরেগাঁও মামলার কী গতি হয়, তা-ও দেখা হবে। সর্বোপরি বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা নিয়ে তিনি সরকারের সঙ্গে কী ভাবে দর কষাকষি করেন, তার জন্যও সকলে অপেক্ষা করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন