সংসদে দাঁড়িয়েই দলিত গবেষক রোহিত ভেমুলাকে বাচ্চা বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। একটা বাচ্চার মৃত্যুকে যে ভাবে রাজনীতির হাতিয়ার বানানো হচ্ছে, তা দেখে রাগ হচ্ছে— বলেছিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি! হায়দরাবাদের সেই জল গড়িয়েছে বহুদূর। আজ, আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে ব্যঙ্গাত্মক একটি খোলা চিঠিতে সেই স্মৃতি ইরানিকে মা বলেই ডাকলেন জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমার! প্রশ্ন তুললেন, যদি তিনি মা-ই হন, তবে জবাব দিন, কোনও মা কি তাঁর বাচ্চাদের সঙ্গে এমন করতে পারে?
নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) আন্দোলনরত পড়ুয়াদেরও বাচ্চা বলেই সম্বোধন করেছিলেন স্মৃতি। আর সেই সব মিলিয়েই এ বার তোপ দেগেছেন ছাত্রনেতা! জেএনইউয়ের মিছিলে আফজল গুরুর সমর্থনে স্লোগান তোলার অভিযোগ, ভুয়ো ভিডিও, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতারি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ছাত্রদের দোষী প্রমাণ করার প্রসঙ্গ টেনে কানহাইয়া একহাত নিয়েছেন স্মৃতিকে। বলেছেন, ‘‘আপনার এই মায়ের মতো ভালবাসার উষ্ণতা নিয়েই আমরা লেখাপড়া করছি। আপনার রাজত্বেই আমরা শিখছি খিদে আর পুলিশ কুকুরের মধ্যে থেকেও কী করে লেখাপড়া করে যেতে হয়!’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে গত ১১ দিন ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন জেএনইউয়ের ছাত্রদের একাংশ। ক্যাম্পাসে বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) দৌরাত্ম্যের প্রসঙ্গে শুধু মন্ত্রীই নন, বরং বিজেপি-আরএসএসকেও ছেড়ে কথা বলেননি কানহাইয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমার এক বন্ধু প্রশ্ন করেছে, মোদীর রাজত্বে আমাদের নিজেদের মায়েরা ছাড়া গো-মাতা, ভারত-মাতা, গঙ্গা-মাতা আর স্মৃতি-মাতারাও রয়েছেন। তা সত্ত্বেও কী করে মারা গেল রোহিত? আমার কাছে উত্তর নেই, আপনাকেই জিজ্ঞেস করছি! আমার এই বন্ধু বলেছে, আপনি হলেন অ্যান্টি ন্যাশনাল (রাষ্ট্রদ্রোহী) সন্তানদের অ্যান্টি-র্যাশনাল (যুক্তিবিরোধী) মা!’’
তাঁর আরও প্রশ্ন, ভারতবর্ষের কোনও মা কি তাঁর বাচ্চাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে? ভুয়ো ভিডিওর ভিত্তিতে বাচ্চাদের শাস্তি দিতে পারে? কানহাইয়ার কথায়, ‘‘আপনার যে সন্তানেরা ১১ দিন ধরে অনশন করছে তারাই আপনাকে এই প্রশ্ন করছে। সময় পেলে জবাব দেবেন!’’ জেএনইউয়ের অনশনকারী ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে আজ মাতৃ দিবসে ক্যাম্পাসে বসবাসকারী, বাইরে থেকে আসা ও স্টাফ কোয়ার্টাসের মহিলারা ছাত্রদের সঙ্গে এক দিনের প্রতীকী অনশন করেছেন। ছিলেন হুইলচেয়ারে বসা ৮০ বছরের এক বৃদ্ধাও।
হায়দরাবাদের জল যে দিল্লি পর্যন্ত গড়িয়েছে, ঠারে ঠোরে টের পেয়েছেন স্মৃতি। জামিনে ছাড়া পেয়েই কানহাইয়া বলেছিলেন, আফজল নয়, তাঁর আদর্শ রোহিত ভেমুলা। সেই রোহিতকেই ‘বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করায় দানা বেঁধেছিল ক্ষোভ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বাচ্চা বলা কি তবে দলিত গবেষকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটই চাপা দেওয়ার কৌশল— প্রশ্ন তোলে রাজনৈতিক মহল। আর এ বার সেই রোহিতের প্রশ্নে মাতৃ দিবসেই প্রশ্ন তুলে দিলেন কানহাইয়া।