কাল কি কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে?
চাপা গলায় প্রশ্নটা করেই ফেললেন দিল্লি পুলিশের এক কনস্টেবল।
কৃষ্ণ মেনন মার্গের পাঁচ নম্বর বাংলো। এটাই প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের সরকারি বাসভবন।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় হঠাৎ সেখানে সাজো সাজো রব। পুলিশের গাড়ি, ব্যারিকেড। টিভি চ্যানেলের ওবি ভ্যান। ভিড় জমেছে শুনে, ইন্ডিয়া গেটের কয়েক জন আইসক্রিমওয়ালাও কোথা থেকে এসে হাজির।
উল্টো দিকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর বাড়ির নিরাপত্তা কর্মীরাও চমকে উঠেছেন। হঠাৎ হলটা কী?
ঘণ্টা দেড়েক আগে বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে শপথ নিতে ডেকেছেন কর্নাটকের রাজ্যপাল। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির সহকারী আইনজীবীরা কাগজপত্র সাজিয়ে তৈরিই ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টায় তাঁরা হাজির হন সুপ্রিম কোর্টে— মাঝ রাতেই বিচার চাই। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে। যে কোনও সময়ে তাঁর বাংলোয় নাটক শুরু হবে। তাই তাঁর বাড়ির দিকেই গোটা সংবাদমাধ্যমের নজর। আইন-আদালতের সাংবাদিকরা অনেকেই বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। একে একে তাঁরাও এসে হাজির।
দীর্ঘদিন প্রধান বিচারপতির বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবলের প্রশ্নটা সঙ্গত। সাম্প্রতিক অতীতে ফাঁসি ঠেকাতেই প্রধান বিচারপতির সামনে মধ্যরাতে এ হেন ভিড় জমেছে। ২০১৪-য় এক বার নিঠারি-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সুরিন্দর কোহলির ফাঁসি ঠেকাতে। তার পরে ২০১৫-য় ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি ঠেকানোর আর্জিতে। তারও আগে ২০১৩-তেও সেই ফাঁসি ঠেকাতেই মধ্যরাতে শুনানি হয়েছে।
ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পক্ষে সেই রাতে জোর সওয়াল করেছিলেন তৎকালীন এজি মুকুল রোহতগি। বুধবার রাত দেড়টায় তিনি বিজেপির হয়ে সওয়াল করতে কোর্টে হাজির হতেই আওয়াজ উঠল, ‘আপনি না এলে জমছিলই না!’ হেসে এজলাসে ঢুকলেন রোহতগি। রাত পৌনে দু’টোয় অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, তিনিও দিব্যি নিরুত্তাপ।
রাজনৈতিক মামলায় মধ্যরাতের শুনানির নজিরও রয়েছে। প্রবীণ আইনজীবীরা বলছেন, কর্নাটকের মতো ১৯৯৮-এ উত্তরপ্রদেশে কল্যাণ সিংহ-জগদম্বিকা পালের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ নিয়ে মধ্যরাতে শুনানি হয়েছে। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বিচারপতি এম এ বেঙ্কটাচেলাইয়ার বাসভবনে রাম জন্মভূমি নিয়ে শুনানি হয়েছিল। তারও আগে ১৯৮৫-তে শিল্পপতি এল এম থাপারের জামিনের আবেদন শুনতে মাঝরাতে শুনানি করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি ই এস বেঙ্কটারামাইয়া।
বুধবার কিন্তু কংগ্রেসের আর্জিতে সাড়া দিয়ে নিরপেক্ষতাই দেখালেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। কংগ্রেসই কিছু দিন আগে তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব এনেছে। সেই প্রধান বিচারপতির নির্দেশেই বুধবার মধ্যরাতের শুনানি যখন শেষ হল, তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা।
কংগ্রেসের আবেদন অবশ্য খারিজই হয়েছে। সকালেই শপথ নিয়েছেন ইয়েদুরাপ্পা।