পুলিশি পাহারায় কার্তি চিদম্বরম। বুধবার আদালত চত্বরে। ছবি: পিটিআই
দিনকয়েক বিরতির পরে কাল থেকে ‘ছোটা মোদী’ নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে প্যাঁচে ফেলার পরিকল্পনা ছিল কংগ্রেসের। বুধবার আচমকাই ‘ছোটা চিদম্বরম’কে গ্রেফতার করে পাশা উল্টে দিল সিবিআই।
বুধবার লন্ডন থেকে চেন্নাই বিমানবন্দরে পা রাখার পরেই গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের পুত্র কার্তিকে। সেখান থেকে দিল্লি। সিবিআই ১৫ দিনের জন্য কার্তিকে হেফাজতে চাইলেও এক দিনের মেয়াদ মঞ্জুর করেছে আদালত। কাল ফের আদালতে তোলা হবে তাঁকে।
আইএনএক্স আর্থিক দুর্নীতি মামলায় কার্তির গ্রেফতারে ফেটে পড়েছে কংগ্রেস। ক’দিন আগেই সুপ্রিম কোর্টে এক আবেদনে পি চিদম্বরম বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার লক্ষ্যে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হেনস্থা করতে পারে সিবিআই-ইডি। সেই আবেদনের শুনানির আগেই এই গ্রেফতারি। কংগ্রেসের বক্তব্য, প্রায় ১৪ হাজার কোটির নীরব-কেলেঙ্কারি থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের তৈরি জবাব, ‘‘সিবিআইয়ের কাজে সরকার নাক গলায় না।’’
কার্তি কাহিনি
• দুর্নীতি ও বিদেশি মুদ্রা আইন ভাঙার অভিযোগ
• ২০০৭-এ পিটার ও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের সংস্থা আইএনএক্স মিডিয়ায় বেআইনি ভাবে ৩০০ কোটি টাকা বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্রের বন্দোবস্ত
• সাড়ে ৩ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ। সুবিধা পাইয়ে দিতে বাবা, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের নাম ব্যবহার
• আইএনএক্সের বিরুদ্ধে আয়কর তদন্ত স্থগিত করার জন্য ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
কার্তি-গ্রেফতার ঘিরে বিজেপির প্রচার দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, এ বারে কি কার্তির বাবাকেও টানবে সিবিআই? কারণ কার্তির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও বিদেশি মুদ্রা আইন ভাঙার যে অভিযোগ রয়েছে, তাতে তাঁর বাবার দিকেও আঙুল ওঠার সুযোগ রয়েছে বলে দাবি বিজেপির একাংশের। অভিযোগ, বাবা অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন আইএনএক্স মিডিয়ার মালিক পিটার ও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়কে বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নে বেআইনি সুবিধা পাইয়ে দিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন কার্তি।
বাবার কী হবে, পরের কথা। আজ সকালে কার্তিকে বিমানবন্দরেই জেরা করে গোপনে দিল্লির বিমানে চাপানো, আদালতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেখে টানাহ্যাঁচড়া-ধাক্কাধাক্কি — পর পর ঘটনায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেস বলছে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনের আগে বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করাই বিজেপির লক্ষ্য। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সিবিআই-ইডি এখন কাঠপুতুল! গত দশ দিনে ৩১ হাজার কোটি টাকার ‘জনধন লুঠ যোজনা’ ঢাকতেই এ সব করা হচ্ছে।’’ কপিল সিব্বলের কটাক্ষ, ‘‘খাঁচার তোতা নয়, সিবিআই এখন সরকারের গান গাওয়া তোতা!’’
সিবিআইয়ের অভিযোগ, কার্তি তদন্তে সহযোগিতা করেননি। ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছিলেন। সমনের জবাব দেননি। গোয়েন্দাসংস্থার দাবি, বিদেশে গিয়ে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছিলেন কার্তি। অভিযোগ উড়িয়ে আদালতে কার্তির আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘আদালতের অনুমতি নিয়েই কার্তি বিদেশে গিয়েছিলেন। তদন্তে সাহায্যও করছিলেন। গত ৬ মাসে তাঁকে সমন পাঠায়নি সিবিআই।’’