ক্যাফেতে মেহভিশ। নিজস্ব চিত্র
মাথায় হিজাব। শরীর ঢাকা আলখাল্লায়। ক্যাশ কাউন্টারে বসা মেয়েটির দিকে অনেকেই বাঁকা চোখে তাকান। কারণ জম্মু-কাশ্মীর এখনও রেস্তরাঁ ব্যবসায় মেয়েদের দেখতে তেমন অভ্যস্ত নয়। সেখানেই মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিজের ক্যাফে খুলে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা চালাচ্ছেন কাশ্মিরী তরুণী মেহভিশ মেহরাজ জারগার।
শ্রীনগরের বেমিনা এলাকায় রাজ্যের প্রথম মহিলাচালিত এই ক্যাফের বয়স মাত্র ছ’মাস। এরই মধ্যে পসার জমেছে বেশ। কাঠের গুঁড়ি আর চিনার পাতার নকশা তোলা ক্যাফের সাজ। তবে মেনুতে ইটালি, মেক্সিকো বা চিন— হাজির সব রকম পদই। যে কাশ্মীরে একটু শান্তির খোঁজে হন্যে হয়ে থাকেন সাধারণ মানুষ, সেখানেই নিজের শর্তে বেঁচে নিজের স্বপ্ন সফল করা আর একটু হাসি-গল্প-রসনা তৃপ্তির জায়গা তৈরি করার মতো কঠিন কাজটা করে দেখিয়েছেন মেহভিশ।
কথায় কথায় আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘বুটিক কিংবা বিউটি পার্লার নয়, ক্যাফেই খুলতে চেয়েছিলাম। আমি নিজে খেতে ভালবাসি। আড্ডা দিতে ভালবাসি। তাই চেয়েছিলাম এমন একটা জায়গা হোক যেখানে তরুণ প্রজন্ম প্রাণ খুলে হাসবে। খাবারটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবে।’’
ক্যানসারের কবলে মাত্র সাত বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন মেহভিশ। মা আর দুই ছোট বোনকে নিয়ে চার জনের ভরা সংসার। অভাব ছিল। তা বলে হার মানেননি মেহভিশের মা। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে মেয়েদের পড়িয়েছেন। মায়ের অনুপ্রেরণাতেই আইনে স্নাতক হয়েছেন মেহভিশ। বললেন, ‘‘ব্যবসার কথা শুনে প্রথম দিকে মা আর বোনেরা ঠিক মতো ভরসা পাচ্ছিল না। পরে অবশ্য ওরাই আমায় সাহস জুগিয়েছে।’’
মেয়ে বলে মেহভিশকে শুরুতে কম তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয়নি। তবে কান দেননি কিছুতেই। বললেন, ‘‘যে স্বপ্ন এত দিন দেখেছি, শুধু তাকেই পাখির চোখ করে এগিয়ে গিয়েছি। সম্মান অর্জন করতে গেলে
সবার আগে মেয়েদের আর্থিক স্বাধীনতার প্রয়োজন।’’
মেহভিশের মতো কাশ্মীরের অনেক মেয়েই এখন স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন পথ খুঁজে নিচ্ছেন। অশান্ত কাশ্মীরে গুলি আর ছররায় জখম চোখগুলিতে সেই স্বপ্ন বুনে দিয়েই চেনা ছকের বাইরে অন্য পথ দেখাচ্ছেন মেহভিশরা।