আগামী সোমবার থেকে রাস্তায় জো়ড়-বিজোড় নীতি চালুর পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখল দিল্লি সরকার। এক রাশ কঠিন শর্ত চাপিয়ে ওই
নীতিতে সায় দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। এর পরেই আজ বেলা তিনটেয় মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকে বিষয়টি আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার। ঠিক হয়েছে, সোমবার নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন দাখিল করবে সরকার। তার পরে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত হবে।
প্রবল দূষণ সামলাতে নাজেহাল দিল্লি সরকার ঠিক করেছিল, জোড় ও বিজোড় নম্বরের গাড়ির আলাদা আলাদা দিনে রাস্তায় নামার নিয়ম সোমবার থেকে ফের চালু করবে তারা। এ নিয়ে সরকারকে প্রবল তোপ দাগে পরিবেশ আদালত। প্রথমেই, জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে ছাড়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বিরক্ত আদালত জানতে চায়— মহিলাদের, সরকারি কর্মচারীদের ও দু’চাকার গাড়িগুলিকে এই বিধিনিষেধের আওতা থেকে বাদ দিলে কী ভাবে রাস্তা থেকে যানের সংখ্যা কমবে? ৫০০টি গাড়ি কমিয়ে ১০০০টি স্কুটার বা মোটরবাইক চালালে কী ভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়? দু’চাকার যানেই যে বায়ুদূষণ বেশি, তা বহুপরীক্ষিত সত্য। তাই আদালতের আদেশ, ছাড় পাবে শুধু প্রাকৃতিক গ্যাসে চলা গাড়ি, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স ইত্যাদি জরুরি পরিষেবা।
সরকারের পার্কিং-ফি চার গুণ বাড়ানোর তত্ত্বেও আপত্তি আদালতের। বলা হয়, এতে শুধু নির্মাণ ব্যবসায়ীদের পকেট ভরবে। চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের ওপরে। তাঁরা পার্কিং লটের বদলে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করাতে বাধ্য হবেন। তাতে আমজনতার আরও নাভিশ্বাস উঠবে। রাস্তায় দশ বছরের বেশি পুরনো ডিজেল গাড়ি ও পনেরো পেরোনো পেট্রোল গাড়ি রুখতে ট্রাফিক পুলিশকে সক্রিয় করার নির্দেশ দেয় আদালত। যমুনার তীরে নির্মাণকাজ কেন থামানো হচ্ছে না, তা নিয়েও ভর্ৎসনা করে সরকারকে।
চলতি বছরের জানুয়ারি ও এপ্রিলে দু’বার পনেরো দিনের জন্য জোড়-বিজোড় নীতিতে শহর পরিবহণ-ব্যবস্থা চালিয়ে দেখেছে সরকার। আদালত মনে করিয়ে দেয়, তাতে দূষণ-মাত্রা কমেছিল, এমন কোনও প্রমাণ নেই। বরং দেখা গিয়েছে, জল ছড়ালে বা বৃষ্টি হলে দূষণের মোটা চাদরটাকে কিছুটা হলেও সরানো যায়। তাই আদালতের বক্তব্য, সরকারি আধিকারিকেরা প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ব্যবহার করে ‘কৃত্রিম মেঘ’ উৎপাদনের ব্যবস্থা করুন। যত দিন না বৃষ্টি হচ্ছে, তত দিন মাটির ১০০ মিটার ওপর থেকে জল ছেটানোর ব্যবস্থা করুন। এত কিছু মেনেও ‘পরিবেশ সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা’ তথা জোড়-বিজোড় পদ্ধতি চালু করার আগে সরকারকে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সঙ্গে পরিষ্কার ভাবে কথা বলে নিতে হবে, যাতে আন্তঃরাজ্য গাড়ি চলাচলের সময়ে যানজট এড়াতে দুই সরকারই রাজ্যের সীমানায় বিশেষ বাহিনী মজুত রাখে। আদালতের কঠোর নির্দেশ, পরিস্থিতি এত সঙ্গিন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও চলবে না। যখনই ক্ষতিকর ভাসমান কণা পিএম-১০ তিনশোর মাত্রা ও পিএম-২.৫ পাঁচশোর মাত্রা ছাড়াবে, তখনই চালু করতে হবে এই ‘পরিবেশ সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা’। এবং তা এই সব শর্ত মেনে।
টানা ছ’দিন ধরে দূষিত ধোঁয়াশার চাদরে মুড়ে থাকলেও, এত কিছু শোনার পরে জো়ড়-বিজোড়ের ভাবনা থেকেই পিছিয়ে এসেছে কেজরীবাল সরকার। সূত্রের বক্তব্য, সোমবার আদালতে তারা ফের যে আবেদন করবে, তাতে মহিলাদের জন্য ছাড়ের বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হবে। কারণ, মহিলাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ঝুঁকি নিতে নারাজ আপ সরকার।