বন্যা পরিস্থতি খতিয়ে দেখতে কেরলের ওয়েনাড়ে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। পিটিআই
দলীয় স্তরে তাঁরা দু’জনেই পরস্পরের সঙ্গে সমঝোতার প্রবল বিরোধী। জাতীয় এবং বঙ্গ রাজনীতিতে যখন সিপিএম ও কংগ্রেস বোঝাপড়া করে চলছে, নিজেদের রাজ্যে তাঁরা উল্টো পথে। কিন্তু বন্যা-দুর্গত কেরলে বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালাকে সঙ্গে নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলায় নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বন্যা-কবলিত এলাকা দেখতে হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী বিরোধী দলনেতা। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার দাবি জানাতেও দু’জনে এক সুর। সিপিএম এবং কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতাই বলছেন, রাজ্যে বিপর্যয় মোকাবিলাই এখন অগ্রাধিকার। রাজনীতি নয়।
কেরলে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। মৃতের সংখ্যা অন্তত ৩৭। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৬০ হাজার মানুষের ঠাঁই এখন ত্রাণ শিবিরে। বিজয়ন এবং চেন্নিথালার সুরেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও কেন্দ্রের কাছে কেরলের জন্য উপযুক্ত সহায়তার দাবি তুলেছেন। এমতাবস্থায় ররিবার দক্ষিণী ওই রাজ্যের দু’টি জেলায় উড়ান-সমীক্ষা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছেন, পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। কেরলকে বন্যা মোকাবিলায় আপাতত ১০০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সাহায্যের ঘোষণা করেছেন তিনি। আশ্বাস দিয়েছেন, পরে প্রয়োজনে আরও সাহায্য দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন অবশ্য রাজনাথের কাছে ১২২০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ দাবি করেছেন।
দুর্যোগের মধ্যেই রাজনৈতিক শিবিরে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে কেরলের শাসক সিপিএম এবং বিরোধী কংগ্রেসের হাত মিলিয়ে ময়দানে নামা। দক্ষিণে এর্নাকুলাম, আলপ্পুঝা, পশ্চিমে কোঝিকোড়় বা উত্তরের মলপ্পুরম, ইদ্দুকি জেলায় মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা একসঙ্গেই কপ্টারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। সঙ্গে ছিলেন রাজস্বমন্ত্রী, সিপিআইয়ের ই চন্দ্রশেখরন এবং রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং পুলিশের ডিজি। চেন্নিথালা বলছেন, ‘‘রাজ্যের মানুষ সঙ্কটাপন্ন। আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্দেশ দিয়েছেন, এই সময়ে সব কংগ্রেস কর্মীকে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সকলেই তা-ই করছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের বক্তব্য, ‘‘পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে আমি নিজেই ১ লক্ষ টাকা দিয়েছি। রাজ্যের মানুষের স্বার্থে সকলের কাছেই সব রকম সাহায্য চাইছি।’’ তাঁর মতে, রাজ্যের ১৪টি জেলাই বন্যাক্রান্ত— এমন অবস্থা গত ৯০ বছরে হয়নি! যাঁদের ঘর ভেঙেছে, তাঁদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা ও প্রাণহানির ক্ষেত্রে চার লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে বিজয়ন সরকার। ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে নিজেদের মতো করে উদ্যোগী হয়েছেন শাসক সিপিএম ও বিরোধী কংগ্রেস কর্মীরা।