কৃষক টিএন মুকুন্দন। — ফাইল চিত্র।
ইচ্ছা ছিল, নিজের শহর ত্রিশূরে ঝাঁ-চকচকে শপিং মল বানাবেন। সেই মতো জলাভূমি বোজানোর কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল। শেষমেশ কৃষকের জেদের কাছে হার মানতে হল কোটিপতি ব্যবসায়ীকে! ঘটনাটি ঘটেছে কেরলের ত্রিশূরে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের জেরে হাই কোর্টের নির্দেশে আপাতত বন্ধ হয়ে গিয়েছে শপিং মল তৈরির কাজ।
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন সূ্ত্রে খবর, লুলু শপিং মলের প্রতিষ্ঠাতা আরবের ব্যবসায়ী এমএ ইউসুফ আলি। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর শপিং মল রয়েছে। এ বার নিজের শহর ত্রিশূরেও সেই শপিং মল গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ইউসুফ। কিন্তু ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ৬১ বছরের এক ধানচাষি!
গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে ইউসুফ জানান, এক ‘বিশেষ রাজনৈতিক দল’ উচ্চ আদালতে মামলা করার কারণে ত্রিশূরে লুলু শপিং মল তৈরির পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এর পরেই গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, কোনও রাজনৈতিক দল নয়, আদতে এর নেপথ্যে রয়েছেন ৬১ বছরের কৃষক টিএন মুকুন্দন। দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্যের ক্রমহ্রাসমান জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য লড়াই করছেন তিনি।
ইউসুফ সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করলেও এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুকুন্দন নিজেই। তিনি জানিয়েছেন, তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)-র সদস্য। তবে এই মামলায় পার্টির কোনও ভূমিকা নেই। বরং এ তাঁর একার লড়াই— জলাজমি ও ধানক্ষেত বাঁচানোর লড়াই!
ঘটনার সূত্রপাত আয়ান্তোল গ্রামের এক কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে। সেখানে একটি শপিং মল এবং হাইপারমার্কেট তৈরি করতে চেয়েছিল লুলু গ্রুপ। ২০০৮ সালের কেরল ধানজমি ও জলাভূমি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ধানচাষের উপযুক্ত কোনও জলাভূমিকে কৃষি ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না। অথচ অভিযোগ, রাজস্ব বিভাগীয় আধিকারিক (আরডিও)-র নির্দেশে ধানচাষের জমির ডেটাবেস থেকে আচমকা ওই বিশেষ জমিটির নাম বাদ দেওয়া হয়। এর পরেই ২০২৩ সালে রাজস্ব দফতরের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কেরালা হাই কোর্টে আবেদন করেন মুকুন্দন। গত সপ্তাহে, আরডিও-র নির্দেশ বাতিল করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জমির অবস্থা পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এর জেরেই থমকে গিয়েছে মল তৈরির পরিকল্পনা।
লুলু গ্রুপের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘২০০৮ সালের কেরল ধানজমি ও জলাভূমি সংরক্ষণ আইন কার্যকর হওয়ার অনেক আগেই জমিটি রূপান্তরিত করা হয়েছিল। তাই এটিকে ডেটাবেসে অন্তর্ভুক্ত করা যুক্তিযুক্ত নয়। তবে আমরা হাই কোর্টের রায় বিবেচনা করে দেখছি। সেই অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ তবে আদালতের এই নির্দেশকে ‘জয়’ হিসাবেই দেখছেন মুকুন্দন। তাঁর কথায়, ‘‘এর থেকেই প্রমাণ হয় যে জমিটি আদতে ধানক্ষেত ছিল। এর আগে আয়ান্তোলের কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন যে শপিং মল তৈরির জন্য বাছাই করা জমিটির উল্লেখ কৃষিজমির ডেটাবেসেও ছিল।’’
২০১৬ সাল থেকে ওই জমির জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে আসছেন মুকুন্দন। ১৬১ একর ওই জমি এক বিশাল ধানক্ষেতের অংশ ছিল। পরে লুলু গ্রুপ জমিটি কিনে নেয়। এর বিরুদ্ধেই লড়াই শুরু করেন বৃদ্ধ কৃষক। ত্রিশুরের ভারন্দরাপ্পিলির বাসিন্দা মুকুন্দন। কৃষিকাজ থেকে যে টুকু আয় হয়, তার বড় অংশ মামলা লড়তেই ব্যয় হয়ে যায় তাঁর। তবে বড় বড় পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে কৃষকের এই অসম লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন আইনজীবীরাও। মুকুন্দনের কথায়, “আমার আইনজীবীরা আমার দাবিকে সমর্থন করেন। তাঁরা জানেন, আমার লড়াই সত্যিকারের।’’