Brain Eating Amoeba

মাথায় বাসা বেঁধেছিল ‘ঘিলুখেকো অ্যামিবা’! কেরলে ন’বছরের খুদের মৃত্যুর নেপথ্যে কোন বিরল রোগ?

‘ঘিলুখেকো অ্যামিবা’! এমনই অদ্ভুত নাম তার। মাথার ভিতর ঢুকে নাকি কুরে কুরে খেয়ে ফেলে মস্তিষ্কের অন্দর। আর ‘প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস’ (পিএএম) নামে সেই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েই প্রাণ গিয়েছে কেরলের খুদের। কী এই রোগ?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ১৩:৫১
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

মাথায় ‘ঘিলুখেকো অ্যামিবা’ বাসা বাঁধার জেরে কেরলের দিনকয়েক আগেই মৃত্যু হয়েছে ন’বছরের এক কিশোরীর। একই রোগে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আরও দু’জন। তিনটি ঘটনাই কোঝিকোড় জেলার। ফলে একই জেলায় পর পর তিনটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

Advertisement

‘ঘিলুখেকো অ্যামিবা’! এমনই অদ্ভুত নাম তার। মাথার ভিতর ঢুকে নাকি কুরে কুরে খেয়ে ফেলে মস্তিষ্কের অন্দর। আর ‘প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস’ (পিএএম) নামে সেই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েই প্রাণ গিয়েছে কেরলের খুদের। তিন মাসের এক শিশু-সহ আরও দু’জন ওই রোগে আক্রান্ত। এর পরেই তড়িঘড়ি কোঝিকোড় জেলা জুড়ে সতর্কতা জারি করেছে কেরলের স্বাস্থ্য দফতর।

কী এই রোগ? কী ভাবে ছড়ায়?

Advertisement

চিকিৎসক অনিমেষ কর জানাচ্ছেন, সারা বিশ্বে পিএএম রোগে মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশেরও বেশি। এই রোগের নেপথ্যে রয়েছে ‘নিগ্লেরিয়া ফোলেরি’ নামে এক অ্যামিবা। মাটিতে কিংবা উষ্ণ ও মিষ্টি জলে এই অ্যামিবার বাস। অপরিষ্কার জলে, যেমন নোংরা পুকুরে কিংবা দীর্ঘ দিন ধরে সুইমিং পুলের জলে ক্লোরিন না মেশানো হলে সেখানে এই অ্যামিবা জন্মাতে পারে। সেই জলে স্নান করলে বা সাঁতার কাটলে নাক এবং মুখ দিয়ে এই অ্যামিবা মানবদেহে প্রবেশ করে। তার কয়েক দিনের মধ্যেই মস্তিষ্কের অলফ্যাক্টরি নার্ভে আক্রমণ করে অ্যামিবাটি। সহজ কথায়, কুরে কুরে মস্তিষ্কের কোষ খেয়ে নেয় সে। সে জন্যই এর নাম ‘ঘিলুখেকো’ বা ‘ব্রেন ইটিং’ অ্যামিবা।

কখনও কখনও নিগ্লেরিয়া ছাড়াও অ্যামিবার আর এক প্রজাতি অ্যাকান্থামিবা থেকেও এই রোগ ছড়ায়। এদের ইনকিউবেশন-এর সময়কাল কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হতে পারে। ফলে সে ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দিতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগতে পারে। অনিমেষের কথায়, ‘‘এই রোগ ধরা পড়তে বেশ কিছুটা সময় লাগে। কারণ শুরুতে এই রোগের উপসর্গগুলি সাধারণ ব্যাকটিরিয়াল মেনিনজাইটিসের মতোই হয়। তাই রোগীকে সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু এই প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিসের চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা। তা ছা়ড়া, এটা খুবই বিরল অসুখ। ফলে যখন আসল রোগ ধরা পড়ে, তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।’’

চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত কেরলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আটটি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এর মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শেষ মৃত্যুটি হয়েছে গত ১৪ অগস্ট, কোঝিকোড়ের থামারাসেরিতে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনাগুলি ঘটেছে জেলার আলাদা আলাদা প্রান্তে। ফলে এগুলির মধ্যে কোনও যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা নেই। তা হলে কী ভাবে রোগ ছড়াল, সেটাই ভাবিয়ে তুলছে চিকিৎসকদের। কেরলের স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘তিন মাসের শিশুটি কী ভাবে এই বিরল রোগে আক্রান্ত হল, তা এখনও জানা যায়নি। সম্ভবত স্নানের সময় অ্যামিবা শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তা ছাড়া, সংক্রামিত জল নাক দিয়েও শরীরে ঢুকতে পারে। তবে শুধু যে জল থেকেই সংক্রমণ ছড়ায়, এমনটা নয়। ওই অ্যামিবা ধুলো কিংবা মাটিতেও থাকে।’’

ভারতে এই রোগে প্রথম আক্রান্তের ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছিল ১৯৭১ সালে। ২০১৬ সালে কেরলে প্রথম এই রোগ ধরা পড়ে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সে রাজ্যে মাত্র আট জন ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে গত বছর থেকে ঘিলুখেকো অ্যামিবার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই কেরলে ৩৬ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ন’জনের। ১৯৭৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মাত্র ৩৮১ জন ওই পরজীবীর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার নথি রয়েছে। এর মধ্যে প্রাণে বেঁচেছেন মাত্র সাত জন। বছরখানেক আগে খাস কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালেও এই রোগে আক্রান্ত দু’জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। সঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়ায় তাঁদেরকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো সম্ভব হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement