অসুস্থতা নয়, স্রেফ দলের ‘স্বার্থ-বিরুদ্ধ’ কাজের অভিযোগেই করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল প্রবীণ নেতা কেতকীপ্রসাদ দত্তকে। জেলার প্রভাবশালী কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থর রোষের মুখে পড়ে মাত্রই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সরে যেতে হল কেতকীবাবুকে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন কমলাক্ষবাবুরই পছন্দের সতু রায়। সতুবাবু জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতিও।
করিমগঞ্জ জেলা পরিষদে মোট সদস্য সংখ্যা ২০। সভাধিপতির পদটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ২০১২ সালের ভোটের পরে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ ৯টি করে আসন জিতে আসে। বিজেপি জেতে একটি আসনে। এক নির্দল সদস্যও রয়েছেন। বিজেপিকে বাদ দিলে বাকি ১৯ জনের মধ্যে সংখ্যালঘু মহিলা সদস্য ছিলেন একজনই, এআইইউডিএফের নজরানা বেগম। সংখ্যালঘু রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় কংগ্রেস ও নির্দল, সকলেই তাঁকে সভাধিপতি পদে সমর্থন করেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে এক এআইইউডিএফ সদস্য কংগ্রেসে যোগ দেন। অপর এক
এআইইউডিএফ সদস্য মারা যান। উপনির্বাচনে কংগ্রেস জিতে আসে। ফলে এই মুহূর্তে ১১ জন সদস্য নিয়ে কংগ্রেসই জেলা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এআইইউডিএফের নজরানা বেগমকেই তাঁরা সভাধিপতি পদে রেখে দিয়েছেন কৌশলগত কারণেই। প্রথমত, আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আর কংগ্রেস সদস্যদের মধ্যে থাকলেও সংখ্যালঘু মহিলা কেউই নেই। ২০১৭ সালে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে সভাধিপতি পদ থেকে কোনও সংখ্যালঘু মহিলাকে সরিয়ে দিয়ে ‘অন্য বার্তা’ দিতে চান না কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েই কংগ্রেসের প্রদেশ বা জেলা, কোনও নেতৃত্বের কাছ থেকে অনুমোদন না নিয়ে, দলকে কার্যত অন্ধকারে রেখে পরিষদের কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। অনাস্থা প্রস্তাব দাখিলের পরেই বিষয়টি কংগ্রেস নেতৃত্বের গোচরে আসে। দলের জেলাপরিষদ সদস্যদের এমন সিদ্ধান্ত জেলা কংগ্রেস মেনে নিতে পারেনি। জেলা নেতৃত্বের ধারণা, এর পিছনে বিজেপির ‘কারসাজি’ আছে। এর পরেই দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক ডাকেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেখানে ডাকা হয় দলের জেলা পরিষদ সদস্যদেও। পর পর দু’দিন সভা ডাকলেও ৫ জন সদস্য অনুপস্থিতই ছিলেন। তার মধ্যে তিন জন সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণ ফোন করেও জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। এরপরেই জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব ওই তিন সদস্যকে শো-কজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
শারীরিক অসুস্থতার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই দলীয় কার্যালয়ে আসছিলেন না জেলা কংগ্রেস সভাপতি কেতকীপ্রসাদ দত্ত। জেলা কংগ্রেসের সদস্যরা বৈঠকে বসার আগে সভাপতির কাছ থেকে অনুমতি নেন। স্বাক্ষরের জন্য শো-কজের চিঠিগুলি তাঁর কাছে পাঠানো হয়। তিনি জানিয়ে দেন, ওই চিঠিগুলিতে তিনি সই করবেন না। বিস্ফোরণ ঘটে জেলা কংগ্রেসের রাজনীতিতে। ক্ষুব্ধ উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস নেতা কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘রাজ্যে বিজেপি শাসন ক্ষমতায় এলেও করিমগঞ্জে কংগ্রেসের ভিত দিন দিন মজবুত হচ্ছে। অথচ কংগ্রেসের একাংশ দলকে অবজ্ঞা করে জেলা পরিষদ ভেঙ্গে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন তা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’’ তাঁর বক্তব্য, দলকে অবজ্ঞা করায় তিন সদস্যকে শো-কজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সেই চিঠিতেও কিনা জেলা সভাপতি স্বাক্ষর করছেন না! এটা হতে পারে না। ক্ষিপ্ত কমলাক্ষ গত কালই বিকেলে অসমের ভারপ্রাপ্ত অআইসিসি সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশিকে ফোন করে সব জানান। তার এক ঘণ্টার মধ্যেই কেতকীপ্রসাদ দত্তকে জেলা কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।