মুম্বইয়ের হোটেলে কংগ্রেসের তিন বিধায়ক, কর্নাটকে সরকার ভাঙাগড়ার খেলা?
মকর সংক্রান্তির পর কি কর্নাটকে আবার রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হবে? সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকার? বিজেপি সূত্রে এমনই ইঙ্গিত। দলের তরফে জল্পনা ছড়ানো হয়েছে, মকর সংক্রান্তির পরেই ‘ক্রান্তি’ হবে। কংগ্রেসও বলছে, তাঁদের তিন বিধায়ক মুম্বইয়ের হোটেলে বিজেপির আতিথেয়তায় দিনযাপন করছেন। দলের নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ঘোড়া কেনাবেচার। সব মিলিয়ে সরকার গঠনের সাত মাসের মধ্যেই ফের ভাঙাগড়ার জল্পনা কর্নাটকের রাজনীতিতে।
২০১৮ সালের মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেস-জেডিএস জোট করে সরকার গঠন করে। ২২২ আসনের বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগারে না পৌঁছেও সরকার গঠনের দাবি করেছিল বিজেপি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা সেই সময়েও বিধায়কদের টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস। যদিও শেষ পর্যন্ত তাতে সফল হননি ইয়েদুরাপ্পা। সরকার গঠনের সাত মাস পরেই ফের সেই ঘোড়া কেনা-বেচার অভিযোগে সরগরম কর্নাটকের রাজনীতি।
কেন? কারণ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার বলছেন, ‘‘মুম্বইয়ের একটি হোটেলে আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন রাজ্যের তিন দলীয় বিধায়ক। রয়েছেন কর্নাটকেরই কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক এবং নেতার আশ্রয়ে। সেখানে কী চলছে, দলের তিন বিধায়ককে কত টাকার টোপ দেওয়া হচ্ছে, আমরা সবটাই জানি।’’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীকেও এক হাত নিয়েছেন শিবকুমার। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ পলিসি নিচ্ছেন। কিন্তু আমি যদি ওনার জায়গায় থাকতাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এটা ফাঁস করে দিতাম।’’ কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং কংগ্রেস সভাপতি দীনেশ গুণ্ডু রাও এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল, দাবি শিবকুমারের।
আরও পড়ুন: লাইন দিয়ে কুকুর খুন, প্রকাশ্যে এল ভয়ঙ্কর অত্যাচারের ভিডিয়ো
কর্নাটকে কংগ্রেসের যে কোনও সঙ্কটেই বরাবর ‘উদ্ধারকর্তা’ হিসেবে সুনাম রয়েছে ডি কে শিবকুমারের। এমনকি, গত বছর ভোটের পরে জেডিএস-এর সঙ্গে জোট করা, দু’দলের বিধায়কদের হোটেলে নিয়ে রেখে বিজেপিকে কেনা-বেচার সুযোগ না দেওয়া এবং শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করার কৃতিত্ব এই শিবকুমারকেই দিয়ে থাকেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষরা। এ হেন কংগ্রেস নেতার কথার গুরুত্ব কতটা, তা বোঝেন কংগ্রেস এবং জেডিএস নেতৃত্বও। তাই তাঁর এই মন্তব্যের পরই ওই তিন বিধায়কের সম্পর্কে দলের নেতারা খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছেন বলে একটি সূত্রে খবর। রাজ্য বিজেপির তরফেও বলা হয়েছে, মকর সংক্রান্তির পরই ‘ক্রান্তি’ হবে। যদিও সেই ‘ক্রান্তি’ যে কী হতে চলেছে, তা বিশদে জানাতে চায়নি বিজেপি।
আরও পড়ুন: ‘মাথা কেটে ফুটবল খেলা’ হাওড়ার সেই রামুয়া খুন! গভীর রাতে খড়দহের ফ্ল্যাটে ঢুকে গুলি
২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনসরকার টিকিয়ে রাখতে বিরোধী বিধায়কদের টাকা ও পেশিশক্তির বলে নিজেদের দলে টানার অভিযোগ ওঠে বি এস ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে। ওই সময়ের মধ্যে জেডিএস এবং কংগ্রেসের ২০ জন বিধায়ক নিজেদের পদ থেকে ইস্তফা দেন। উপনির্বাচন হয় ওই আসনগুলিতে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে ইয়েদুরাপ্পার এই কৌশলই ‘অপারেশন লোটাস’ নামে পরিচিত। ফের সেই চেষ্টা চলছে দাবি করেও শিবকুমার বলেন, বিজেপির এই ‘প্রচেষ্টা’ সফল হবে না। দেখা যাক। আপনারা কোন ‘ক্রান্তি’র ইঙ্গিত করছেন, আমরা বুঝি।’’
সরকার গঠনের পর থেকেই কংগ্রেসের একাধিক বিধায়ক অভিযোগ করে আসছেন, কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার জন্য তাঁদের নানা রকম টোপ দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম বিপুল অঙ্কের টাকার টোপ। পদ্ম শিবির যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে বরাবরই দাবি করে আসছে, নিজেদের জোটের অন্দরের কোন্দল ধামাচাপা দিতে বিজেপির ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)