ক্ষমাপ্রার্থী: আত্মসমর্পণের পরে কুন্দন। রবিবার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।
ধারালো অস্ত্রে পুলিশ ইনস্পেক্টরের গলা কেটে রক্তমাখা ধড়-মুণ্ড জাতীয় সড়কে ফেলে রেখে গিয়েছিল সে। ‘তালিবানি’ কায়দায় সেই কোতলের খবরে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ।
রবিবার রাঁচীতে পুলিশকর্তার সামনে মূলস্রোতে ফেরার অঙ্গীকার করে সেই ঘটনার মূল অভিযুক্ত কুন্দন পাহন বলল, ‘‘আমার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তার জন্য আমি দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী।’’ ঝাড়খণ্ড পুলিশের এডিজি (অভিযান) রাজকুমার মালিক বললেন, ‘‘কুন্দনের অস্ত্রত্যাগ ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছে ঐতিহাসিক দিন।’’ আর এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘হামলা চালিয়েই অনেকটা অরণ্যদেবের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যেত কুন্দন। কাজটাই শুধু অন্য রকম করত।’’
প্রায় দু’দশক আগে কুন্দন ঢুকেছিল মাওবাদী সংগঠনে। রাজ্যের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা, অস্ত্র লুঠ, খুন, বিস্ফোরণ, অপহরণ, তোলাবাজির ১২৮টি মামলা ঝুলছে। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে বুণ্ডুর ডিএসপি প্রমোদ কুমার-সহ ৭ জওয়ানকে উড়িয়েছিল কুন্দন। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ২০০৮ সালের জুলাইয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়ক রমেশ সিংহ মুন্ডাকে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে গুলি করে খুন করে। পূর্ব সিংভূমে হোলির দিন ফুটবল প্রতিযোগিতার আসরে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে মারে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সাংসদ সুনীল মাহতো ও তাঁর দেহরক্ষীদের।
২০০৯ সালের অক্টোবরে রাঁচীর কাছে অরকীর একটি বাজারে দিনদুপুরে স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইনস্পেক্টর ফ্রান্সিস ইন্দওয়ারকে গলা কেটে খুন করার অভিযোগও রয়েছে কুন্দনের বিরুদ্ধে। তাঁর রক্তমাখা মাথা, ধড় সে রেখে যায় ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কে।
এক সময় কুন্দনের নাম এলেই সংবাদমাধ্যমে দেখা যেত জংলা পোশাক, মাথায় টুপি পরা ছবি। রবিবার কুন্দন দাবি করল, ‘‘ওই ছবিটা একেবারেই আমার নয়। এর আগে কেউ আমার ছবি তুলতে পারেনি।’’ মঞ্চের সামনে বসে তখন ৯ বছরের সরলি কুমারী, রাঁচীর নামকুমের কনভেন্ট স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। লাজুক হাসিতে বলল, ‘‘বাবাকে আমিই সহজে দেখতে পেতাম না। অন্য কেউ কী করে ছবি তুলবে!’’
কেন ফিরল মূলস্রোতে কুন্দন? তার নিজের দাবি, তার পরিবারের ২ হাজার ৬০০ একর জমি ছিল। সব বেদখল হয়ে যায়। এর পরই সে মাওবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। কিন্তু এখন তার মনে হয়েছে, ২০ বছর ধরে সে সব ভুল কাজ করে গিয়েছে। পুলিশের ধারণা, লুঠের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে শাগরেদদের সঙ্গে ঝামেলাও সংগঠন ছাড়ার কারণ হতে পারে। পুলিশের কাছ থেকে এ দিন ১৫ লক্ষ টাকার চেক হাতে পেয়ে কুন্দন বলে, ‘‘এ বার থেকে মানুষের জন্য ভাল কাজ করার চেষ্টা করব।’’