হাত ধরে তুমি...। সোমবার হাজিপুরের মঞ্চে লালুপ্রসাদ ও নীতীশ কুমার। ছবি: পিটিআই
দু’দশক আগে দেখা যেত এ রকম দৃশ্য! একই মঞ্চে লালুপ্রসাদ ও নীতীশ কুমার। প্রতিপক্ষ নয়, মিত্র হিসেবে। বহু বছর ধরেই আমূল পাল্টে গিয়েছিল সেই ছবি। কিন্তু আজ রাজ্য-রাজনীতির দুই যুযুধান শিবির যেন ফিরে গেল কুড়ি বছর আগে। একই মঞ্চে, জোটবদ্ধ হয়ে সমস্বরে জানিয়ে দিল, কমণ্ডল রাজনীতিকে রুখতে আবার মণ্ডল রাজনীতি এখন বিহারের ভবিষ্যৎ।
‘ফের লালুর কোলে নীতীশ’ এ কথা বলে কয়েক দিন আগেই কটাক্ষ করেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। নীতীশ এ ব্যাপারে নীরব থাকলেও হাজিপুরের নির্বাচনী প্রচারের এই মঞ্চে নীতীশকে পাশে নিয়ে তার জবাব দিয়েছেন লালুই, “ছোট ভাই তো বড় ভাইয়ের কোলেই আসবে। নীতীশ আমার ছোট ভাই। ও আমার কোলে আসবে না তো কী তোমাদের কোলে যাবে?” লালু-নীতীশ একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। পাশাপাশি বসলেন, এক সঙ্গে বসে চা খেলেন। কথা বললেন বিভিন্ন প্রসঙ্গে। ভাষণ শেষে দু’জনে হাত তুলে উপস্থিত জনতাকে যখন বিজেপি-বিরোধী যাত্রার সূচনা-বার্তা দিলেন, হাততালিতে ফেটে পড়ল সভাস্থল।
২১ অগস্ট রাজ্যের ১০টি বিধানসভার উপ-নির্বাচন। তারই প্রচার শুরু করলেন লালু-নীতীশ। পটনা থেকে একই হেলিকপ্টারে তাঁরা আজ সভাস্থলে হাজির হন। লালু বলেন, “আমরা একই পরিবারের। মাঝে আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম। দেখলাম, দেশ ভুল নেতৃত্বের হাতে চলে গিয়েছে। মানুষ চাইছে ভাই-ভাইয়ের মিলন।” প্রথমে ভাষণ দিতে উঠে নীতীশ নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে বলেন, “বলা হয়েছিল ‘আচ্ছে দিন’ আসবে। কোথায় সেই দিন! মানুষ তো অপেক্ষা করছে। তবে বিজেপির কিছু নেতার জন্য তো অবশ্যই ‘আচ্ছে দিন’ এসেছে।” নীতীশ বলেন, “এত কম ভোটে অতীতে কোনও দল সরকারে আসেনি। তাতেই ক্ষমতার দম্ভে আমাকে এবং লালুজিকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে।” ক্ষমতার জন্য বিজেপি যে দেশ ভাগ করতেও পিছ পা হবে না, সেই হুঁশিয়ারি দিয়ে জেডিইউ প্রধান বলেন, “বিজেপি-বিরোধী লড়াই শুরু হল। সরকার চালানো সহজ। কিন্তু দেশ চালানো কঠিন। তাই দেশকে রক্ষা করতে বিজেপি-বিরোধী শক্তিকে এক জোট হতে হবে।”
প্রতিদ্বন্দ্বী নীতীশের জটিল চরিত্রকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লালু এক সময় বলেছিলেন, নীতীশের পেটেও দাঁত আছে। আর এই তো কয়েক মাস আগেও লালু সম্পর্কে নীতীশের মন্তব্য ছিল, বিহারে জঙ্গলরাজের জনক লালুপ্রসাদকে মানুষ ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। সেই তিক্ততা ঘুচিয়ে লালু টেনে আনেন ‘বড়ে ভাই-ছোটে ভাই’-এর গল্প। হাজিপুরের জোট প্রার্থী
তথা জেডিইউয়ের রাজেন্দ্র রাইয়ের হয়ে এই প্রচার সভায় লালুপ্রসাদ বলেন, বিহারে যে বিজেপি-বিরোধী জোট তৈরি হল, সেটাই আগামী দিনে দেশকে পথ দেখাবে। উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম-মায়াবতী জোট তৈরির বিষয়েও আশাবাদী তিনি। পরে সন্ধ্যায় মহিদিনগরে জোট তথা আরজেডি প্রার্থীর হয়েও তাঁরা প্রচার করেন।