কঠিন সময়ে তেজ দেখিয়েই উঁচু পদে তেজস্বী

সাত মেয়ে এবং দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে তেজস্বীকেই কি নিজের উত্তরাধিকারী বেছে নিলেন লালু প্রসাদ? নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভায় নম্বর-টু হিসেবে শপথ গ্রহণের পর থেকেই পটনার রাজনৈতিক মহলে প্রশ্নটা ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পটনা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:১৫
Share:

শপথ অনুষ্ঠানে সপরিবার লালু। ডান দিক থেকে দুই ছেলে তেজপ্রতাপ এবং তেজস্বী। বাঁ দিকে রাবড়ি দেবী। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

সাত মেয়ে এবং দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে তেজস্বীকেই কি নিজের উত্তরাধিকারী বেছে নিলেন লালু প্রসাদ? নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভায় নম্বর-টু হিসেবে শপথ গ্রহণের পর থেকেই পটনার রাজনৈতিক মহলে প্রশ্নটা ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় দফতর বণ্টনের খবরে তাতে কার্যত সিলমোহর পড়ে। বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাবেন লালুর ছোট ছেলে তেজস্বী যাদব! এর পরেই লালু-পরিবারের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

Advertisement

পটনার রাজনীতির অন্দরের খবর, বছর চব্বিশের তেজস্বীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দাদা তেজপ্রতাপ এবং বড় দিদি মিসা ভারতী। তাঁদের মধ্যে থেকে শেষ পর্যন্ত তেজস্বীকেই বেছে নিয়েছেন লালু। বড় ছেলে তেজপ্রতাপকে মন্ত্রিসভায় তিনটি দফতর দিলেও উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে পারছেন পরিবারের সকলেই। আর উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তেজস্বী সামলাবেন পূর্ত দফতর এবং অনগ্রসর ও অতি অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়ন দফতর। অঙ্ক বলছে, এই দু’টি দফতরের একটিতে বাজেট বরাদ্দ বেশি এবং অন্যটি সরাসরি নিজের ‘ভোটব্যাঙ্কের’ সঙ্গে জনসংযোগ রক্ষার পথ। এর ফলে কাজের নিরিখে মন্ত্রী হিসেবে নিজেকে দক্ষ প্রমাণ করে সংগঠনের রাশও হাতে রাখতে পারবেন তেজস্বী।

পড়ুন: চা-চক্রে ঘরোয়া আড্ডার আসর জমালেন মমতা

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, কেন আগে রাজনীতিতে আসা তথা তুলনায় অভিজ্ঞ বড় মেয়ে মিসা বা একাদশ শ্রেণি পাশ করা বড় ছেলেকে বাদ দিয়ে নবম শ্রেণি পাশ ছোট ছেলেকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে বসালেন লালু? আরজেডি সূত্রে খবর, সাংগঠনিক যোগ্যতায় এই দু’জনের তুলনায় অনেক এগিয়ে তেজস্বী। লালু তথা আরজেডির কঠিন সময়ে দলকে কার্যত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই। বাকি দু’জন নয়। পশুখাদ্য মামলায় লালু গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়ার পরে দলকে একত্রিত করে আন্দোলনের শুরুটা করেছিলেন তিনি-ই। সে সময়ে মিসা এবং তেজপ্রতাপ পটনায় থাকলেও পথে নেমে দলের নেতাদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারেননি। বরং বয়সে ছোট এবং রাজনীতিতে নবীন হয়েও পটনা থেকে দিল্লি, ঝাড়খণ্ড আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট, সর্বত্রই লড়াইটা চালিয়েছেন তেজস্বী। তখনই লালু বুঝেছিলেন, তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার রক্ষার ক্ষমতা রয়েছে ছোট ছেলেরই। লোকসভা নির্বাচনে ছোট ছেলেকেই নামানোর কথা ভেবেওছিলেন। কিন্তু প্রবল মোদী হওয়ায় সে ঝুঁকি না নিয়ে স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং মেয়ে মিসাকে মাঠে নামিয়েছিলেন বটে, তবে দু’জনেই হেরে গিয়েছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনে দুই ছেলেকে জিতিয়ে যেন সেই হারের বদলা নিলেন লালু!

তেজস্বীর এক প্রতিদ্বন্দ্বী, তথা দাদা তেজপ্রতাপের দিনটাই আজ যেন কিছুটা বেসুরো বেজেছে! একে তো ছোট ভাই পেয়ে গিয়েছে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দফতর! তার উপর শপথ নিতে গিয়ে রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দের কাছে কার্যত বকুনি খেয়েছেন তিনি! শপথবাক্যে লেখা ‘অপেক্ষিত’ (Expected) কে ‘উপেক্ষিত’ (Neglected) বলেন তিনি। তাতেই রাজ্যপাল দ্বিতীয় বার তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করতে বলেন। তা নিয়ে শপথ অনুষ্ঠানে কিছুটা হাসাহাসি, গুঞ্জনও ওঠে। অবশ্য তেজপ্রতাপকে যে তিনটি দফতর দেওয়া হচ্ছে, ধারেভারে সেগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের স্বাস্থ্য, বন ও পরিবেশ এবং পরিকল্পনা দফতর দেওয়া হবে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। এবং সূত্রের খবর, তাতে বেশ খুশি তেজপ্রতাপ। যদিও এ নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।

পড়ুন: নিজস্বী তুলেও লালু-কাঁটাই চিন্তা নীতীশের

আর দ্বিতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী? বড় দিদি মিসা? বিয়ের কিছু দিন পর থেকে মিসা ভারতী মা রাবড়ি দেবীর সঙ্গেই থাকেন। রাজনীতিতেও তাঁর হাতেখড়ি হয়েছে ভাইদের আগে। দুই ভাইয়ের বিধানসভা নির্বাচনে যথেষ্ট প্রচারও করেছেন তিনি। দলের সাংগঠনিক ও ডিজিটাল বিভাগও দেখেন। সব মিলিয়ে রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা কিছু কম নয়। সেই মিসা নির্বাচন জেতার দিনই মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। পরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মিসাকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিতে প্রচারও চালানো হয়। স্বাভাবিক ভাবেই বিধান পরিষদের সদস্য করে তাঁকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা হবে বলে প্রচার হয়েছিল। যদিও দিনের শেষে তা হয়নি।

আরজেডি সূত্রের খবর, তেজস্বী উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং তেজপ্রতাপ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর পাওয়ার পরে এ বারে লালুর লক্ষ্য মিসার পায়ের তলায় মাটি শক্ত করা। এখন মিসাকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য রাখার অঙ্ক কষছেন লালু। লোকসভা ও রাজ্যসভার দলনেতা করা হতে পারে মিসাকে। তেজস্বীকে রাজ্য রাজনীতি দেখার দায়িত্ব দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে বড় মেয়েকেই নামাতে আগ্রহী লালু। এখন দেখার, সেই ভারসাম্য আগামীতে কোন নতুন সমীকরণ তৈরি করে।

পড়ুন: শপথে আবেগে ভাসল গাঁধী ময়দান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন