মুসলিমদেরই তিন তালাক বন্ধ করতে দিন, সুপ্রিম কোর্টে বললেন সিব্বল

অযোধ্যায় রামের জন্ম হয়েছিল বলে হিন্দুদের যে বিশ্বাস, তা নিয়ে যদি প্রশ্ন না তোলা হয়, তা হলে তিন তালাক নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। এই দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড আজ আরও যুক্তি দিল, তিন তালাক ১৪০০ বছরের পুরনো বিশ্বাস।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ০৩:৩১
Share:

অযোধ্যায় রামের জন্ম হয়েছিল বলে হিন্দুদের যে বিশ্বাস, তা নিয়ে যদি প্রশ্ন না তোলা হয়, তা হলে তিন তালাক নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। এই দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড আজ আরও যুক্তি দিল, তিন তালাক ১৪০০ বছরের পুরনো বিশ্বাস।

Advertisement

কালই নরেন্দ্র মোদী সরকার শীর্ষ আদালতে জানিয়েছিল, কোর্ট তালাক প্রথা খারিজ করে দিলে সরকার মুসলিমদের বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত নতুন আইন আনবে। আজ পার্সোনাল ল’ বোর্ডের আইনজীবী কপিল সিব্বল পাল্টা দাবি করেন, আদালতের কোনও অধিকারই নেই পার্সোনাল ল’ বা ব্যক্তি আইনে নাক গলানোর। ফলে কেন্দ্র কোর্টকে বলতে পারে না, ‘আপনি তালাক প্রথা খারিজ করে দিলে আমি আইন আনব’। সিব্বলের প্রশ্ন, কোর্ট তালাক প্রথা খারিজ করে দেওয়ার পরে যদি সরকারের আইন সংসদে পাশ না হয়, তা হলে কী হবে! আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি বি এস চৌহান আজ এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য জানান, যত ক্ষণ এই মামলার ফয়সালা না হচ্ছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খসড়া তৈরি বন্ধ রাখছেন তাঁরা।

তিন তালাক বিতর্কে বিরোধীদের অভিযোগ, মহিলাদের অধিকারের কথা বলে মোদী সরকার সংখ্যাগুরুর মতামত সংখ্যালঘুর উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আজ সিব্বলও বলেন, ‘‘এখন গো-রক্ষার নামে খুন করেও বলা হচ্ছে, এটা বিশ্বাসের ব্যাপার।’’ যা শুনে প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর বলেন, ‘‘উদাহরণটা খারাপ। কিন্তু আজকের প্রেক্ষিতে ঠিকঠাক।’’

Advertisement

তিন তালাকের বিরুদ্ধে মোদী সরকারের সব থেকে বড় অভিযোগ ছিল, এটি সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিরোধী। সিব্বল বলেন, বিশ্বাসের প্রশ্নে সাংবিধানিক নৈতিকতার প্রশ্নই ওঠে না। ৬৩৭ সাল থেকে এই প্রথা চলছে। তা ছাড়া, শরিয়ত আইন আসলে ব্যক্তি আইন। সেখানে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা হচ্ছে কি না, তা দেখার প্রশ্ন ওঠে না। যা শুনে বিচারপতি রোহিংটন নরিম্যান বলেন, ‘‘এটা খুবই শক্তিশালী যুক্তি।’’

আরও পড়ুন:তল্লাশির আঁচে লালু-চিদম্বরম, প্রতিহিংসা দেখছে বিরোধীরা

কোরানে তিন তালাকের কথা বলা না হলেও, মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের যুক্তি, এটি ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আবার এটাও ঠিক, তালাকের প্রথাগুলির মধ্যে তিন তালাক অবাঞ্ছিত। সিব্বল বলেন, ‘‘পার্সোনাল ল বোর্ডও বলছে না, তিন তালাক প্রথা ভাল এবং তা চিরদিন থাকবে। আমরাও তা বদলাতে চাই। কিন্তু এ বিষয়ে অন্য কেউ নাক গলাতে পারে না। বদলাতে বাধ্য করতে পারে না।’’ সিব্বল সতর্ক করেন, প্রায় ১৬ কোটি মুসলিমদের ভাগ্য বিচার হচ্ছে। আদালত ব্যক্তি আইনে নাক গলাতে শুরু করলে মুসলিম সমাজে প্রশ্ন উঠবে, শুধু আমাদের বেলাতেই কেন! হিন্দু ধর্মেও অস্পৃশ্যতার মতো প্রথা রয়েছে। মহিলাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়। বাকি সব ধর্মে সব প্রথা সুরক্ষিত থাকবে, কিন্তু মুসলিমদের বেলায় বলা হবে, তাদের ব্যক্তি আইন সংবিধান বিরোধী! প্রধান বিচারপতি তাঁকে এ নিয়ে রাজনীতি করতে বারণ করেন। সিব্বল বলেন, আদালতে তিনি রাজনীতি করেন না। মুচকি হেসে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘ওটা আপনার রক্তে।’’

সিব্বল উত্তর দেন, ‘‘সব থেকে বেশি বিবাহবিচ্ছেদ হয় বৌদ্ধদের মধ্যে। এমন তো নয় যে, মুসলিমরা সকালে ঘুম থেকে উঠেই ‘তালাক, তালাক, তালাক’ বলতে শুরু করে দেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন