Plane Crash

করোনা ভুলে উদ্ধারে ঝাঁপ

এঁদের চিকিৎসার জন্য রক্ত লাগে? তাই রাত হলেও করোনার ভয়কে অগ্রাহ্য করেই ছুটে এসেছেন বহু মানুষ। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ০৩:১৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১টা পেরিয়ে গিয়েছে। কোঝিকোড় এবং মল্লপুরমের ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে সারি দিয়ে দাঁড়ানো বহু মানুষ। করোনার কারণে দূরত্ববিধি মেনে, হাতে গ্লাভস আর মুখে মাস্ক পরে ওঁরা দাঁড়িয়ে রক্ত দেবেন বলে। কোঝিকোড়ের কারিপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটু আগেই বিমান ভেঙে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের। তা ছাড়া সকালেই ইড্ডুক্কি-তে ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। বেশ কয়েক জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধারকাজ তখনও চলছে। যদি এঁদের চিকিৎসার জন্য রক্ত লাগে? তাই রাত হলেও করোনার ভয়কে অগ্রাহ্য করেই ছুটে এসেছেন বহু মানুষ।

Advertisement

কান্নুরের ছবিটা আবার অন্য। কারিপুরে যে সব বিমানের নামার কথা ছিল, তত ক্ষণে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলি নামবে কান্নুরে। অত রাতে বিমানের যাত্রীরা কান্নুরে নেমে খাবার কোথায় পাবেন? তাই অতিমারি বা সময়ের তোয়াক্কা না করেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার তৈরি করে তা প্যাকেটবন্দি করতে ব্যস্ত একদল।

দু’টো ছবিই কেরলের। ইশ্বরের আপন দেশের। মাস তিনেক আগে বাজি-ভরা ফল খেয়ে গভর্বতী হাতির মৃত্যুর পরে রাতারাতি খলনায়ক হয়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যটা! কেন্দ্রের মন্ত্রী থেকে রূপোলি পর্দার নায়ক-নায়িকা বা ক্রিকেটার- ওই ঘটনার জন্য সকলেই নানা সুরে গোটা রাজ্যকে তুলোধনা করেছিলেন। ওই একই সময়ে দেশের আরও কয়েকটি জায়গায় এই ধরনের ঘটনা সামনে এলেও তা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি এঁরা। সেই রাজ্যের এমন ছবিই তুলে ধরে শনিবার দিনভর কেরলের মানবিকতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন নেটিজেনরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: নিজের জীবন দিয়ে অধিকাংশ যাত্রীর প্রাণ বাঁচালেন বায়ুসেনার পদকপ্রাপ্ত পাইলট​

আরও পড়ুন: কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত দুই যাত্রীর কোভিড পজিটিভ, নিভৃতবাসে যেতে বলা হল উদ্ধারকারীদের​

শুক্রবার রাতে যখন কারিপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করতে গিয়ে দু’টুকরো হয়ে গেল এয়ার ইন্ডিয়ার বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের বিশেষ বিমান, তখন ঘরেই ছিলেন ৩২ বছরের ব্যবসায়ী ফজ়ল পুথিয়াকাথ। বোমা ফাটার মতো বিকট আওয়াজ শুনেই প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও প্রতিবেশীদের সঙ্গে দৌড়ে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। দেখেছিলেন দু’টুকরো হয়ে যাওয়া বিমান, তার যাত্রীদের চিৎকার-কান্না। দ্রুত হাত লাগিয়েছিলেন এক জন এক জন করে যাত্রীকে বাইরে আনতে। তত ক্ষণে জড়ো হয়েছেন আরও অনেক স্থানীয় বাসিন্দা। দুর্ঘটনায় পড়া বিমান থেকে আহতদের বাইরে আনার প্রথাগত শিক্ষা নেই ওঁদের। তা ছাড়া ভয় ছিল ভেঙে পড়া বিমানে আগুন লাগারও। তার উপর পাহাড়ে প্রবল বর্ষণে জোঁকের উৎপাত! কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করেই ওঁরা দ্রুত হাত লাগান উদ্ধারকাজে। ততক্ষণে দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও কাজ শুরু করে দিয়েছে। সকলে মিলে হাত লাগিয়েই বেশি রাতে শেষ হয় উদ্ধারকার্য। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আহতদের। দুই পাইলট-সহ ১৮ জনের মৃত্যু অবশ্য ঠেকানো যায়নি। কিন্তু এই অতি তৎপর উদ্ধারকার্যের প্রশংসা করেছেন সকলেই। আহতদের দেখে চিকিৎসকেরাও বলছেন, দ্রুত উদ্ধার না হলে অনেকেরই মৃত্যু হতে পারত। এবং এর জন্য স্থানীয়দের ঝাঁপিয়ে পড়া মানসিকতার প্রশংসায় মুখর সকলে। উদ্ধারকাজে হাত লাগানো স্থানীয়দের অনেকের শরীর থেকে জোঁক ছাড়াতে হিমশিম খান চিকিৎসকেরা।

দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় স্বশাসন বিষয়ক মন্ত্রী এ সি মইদিনকে উদ্ধারকাজ পরিদর্শনের জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। রাতে আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে হাসপাতালে পৌঁছে যান তিনি নিজেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজাকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে। তার পরে টুইটারে স্থানীয়দের তৎপরতার প্রশংসা করে বিজয়নের বক্তব্য, বিপদ ঘটলে কেরলের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এটাই মানবতা। শুধু বিজয়ন কেন, কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর থেকে বিরোধী কংগ্রেসের নেতা রমেশ চেন্নিথালা- সকলেই একে সত্যিকারের ‘কেরল মডেল’ বলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন